ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পুরান ঢাকার চারদিকে উৎসবের আমেজ। দলমত নির্বিশেষে সবাই এ উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। ষষ্ঠীর দিন পূজা মণ্ডপে ভিড় তুলনামূলক কম হলেও শনিবার (২১ অক্টোবর) সপ্তমীতে দেবীর দর্শনে মণ্ডপগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দিনের চেয়ে রাতের বেলায় বেশি সুন্দর, জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। শনিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা অব্দি সরেজমিনে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারের কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে। পূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে দুর্গোৎসবে অংশ নিচ্ছেন অন্যরাও।
পরিবার নিয়ে শাঁখারিবাজারের পূজা দেখতে এসেছেন মালতী সরকার নামের একজন গৃহিণী। দিনের বেলায় স্বামী সৌম্য সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রাতের বেলায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে পূজা দেখতে এসেছেন। তার সঙ্গে ‘প্রতিদ্বন্ধি’ নামক পূজা মণ্ডপের সামনে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, সকালে পূজার যে আনুষ্ঠানিকতা তা বাসায় সেরেছি। আর বাকিটা সন্ধ্যায় মণ্ডপে এসে। সপ্তমীর রাতে পরিবারের সদস্যদের মঙ্গলের জন্য একটা বিশেষ পূজা থাকে। এটা অনেকে করে আবার অনেকে করে না।
মায়ের সঙ্গে রাতে বেলায় পূজা দেখতে এসে উচ্ছাসিত অনিমা নামের পাঁচ বছরে এক শিশু। তার মা কাকলি ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাতে পূজামণ্ডপে ঘুরতে অভ্যস্ত। তাছাড়া রাতের বেলার হরেক রকমের আলোকসজ্জা বাচ্চারা বেশ উপভোগ করে। রাতে মণ্ডপে দেবীর উপর লাইটিং এর কারণে দেবীদের গায়ের অলংকার আর শাড়ি ঝলমল করে। তখন অনেক আকর্ষণীয় লাগে। এজন্য রাতের পূজা দেখতে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। তাই সবাই রাতে মণ্ডপে বেশি ভিড় করে।
নর্থ ব্রুক হল রোডের পূজামণ্ডপে ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাতের বেলায় পূজা উদযাপন করতে আসা অনুশ্রী রানী বসু বলেন, দিনের বেলায় ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। তাই দিনে মণ্ডপ দেখার সুযোগ একেবারে কম। আত্মীয়স্বজনরাও দিনে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই বেশির ভাগ সময় রাতেই আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়া হয়। তাই পাড়ার সবাই মিলে দল বেঁধে রাতে পূজামণ্ডপে দেবী দুর্গার পূজা করতে প্রসাদ খেতে আসা হয়।
এদিকে পূজায় বন্ধুবান্ধবসহ ঘুরতে এসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ইফতেখার আহমেদ। তিনি বলেন, শাঁখারিবাজারেই আমার সহপাঠীর বাসা। পূজার এক সপ্তাহ আগেই ও আমাদের সবাইকে তাদের বাসায় যাওয়ার ও পূজা দেখতে আসার নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর আগে রোজার ঈদে আবার আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে মিরপুরে আরেকটা বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছি। পূজায় আসা নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করে। তবে আমার মনে হয় না এতে ধর্মীয় কোনও বাধা-বিপত্তি আছে; কারণ এটা সম্প্রীতির বার্তা দেয়।
রাতের বেলায় জাঁকজমকপূর্ণ পূজার বিষয়ে পুরান ঢাকার পূজামণ্ডপের অন্যতম আয়োজক সৌদিপ চক্রবর্তী বলেন, পূজার জন্য রাত-দিন দুটোই সমান। তবে কিছু পূজায় রাতের ও পোশাকের বিশেষত্ব আছে। তবে প্রত্যেক পূজায় রাতের বেলা লোকসমাগম অনেক বেশি হয়। সপ্তমীতে সবাই স্নান করে রাতের বেলায় মা কালরাত্রির পুজো করে। এটা মূলত অসুর বিনাশকারী। এদিন নীল রঙের পোশাক পরলে দেবীর ভালোবাসা পাওয়া যায়।