পায়ুপথে ৩ কেজি সোনা পাচার, যেভাবে গ্রেফতার

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সোনা পাচারের চেষ্টা করেছিলেন মো. সুমন হোসেন (৪৩)। নিজের পায়ুপথে ৩ কেজি ১৬ গ্রাম স্বর্ণ বহন করছিলেন তিনি। পকেটে করে আনেন একটি গোল্ডবার এবং ৯৯ গ্রাম স্বর্ণালংকার। বিমানবন্দর কাস্টমসের গ্রিন চ্যানেল স্বাভাবিকভাবেই পার হয়ে যান তিনি। কেউ তাকে শনাক্ত করতে পারেননি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি সুমনের। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে যান তিনি। তার কাছ থেকে মোট ৩ কেজি ২৩১ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় আগমনী কনকোর্স হলের সামনে থেকে শারজাহ থেকে আসা যাত্রী মো. সুমন হোসেনকে আটক করা হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস হলে ঢাকা কাস্টম হাউস এবং শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের কর্মকর্তারা যাত্রীদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করেন। এক যাত্রীকে বারবার তল্লাশি করা নিয়ে যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এতো কঠোর তল্লাশি আর জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়েই শারজাহ থেকে আসা যাত্রী মো. সুমন হোসেন গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে যান।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ আভিযানিক দল শারজাহ থেকে আসা যাত্রী মো. সুমন হোসেনকে আটক করে। এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে তিনি বিকালে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে সব কার্যক্রম শেষে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করলে আভিযানিক দল কনকোর্স হলের সামনে তাকে আটক করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন তার পায়ুপথে স্বর্ণ রয়েছে। এসময় তাকে কাস্টমসের বডি স্ক্যানারে স্ক্যান করানো হলে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তার দেহের কোন অংশে স্বর্ণ লুকানো আছে তা নিশ্চিত হওয়া লক্ষ্যে উত্তরার একটি ক্লিনিকে এক্সরে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এক্সরে পরীক্ষার পর যাত্রীর পায়ুপথ ও তলপেটে স্বর্ণের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেন ডাক্তার। এরপর যাত্রীকে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের বিমানবন্দর অফিসে নিয়ে আসা হয়।

জিয়াউল হক জানান, বিমানবন্দরে নিয়ে আসার পর যাত্রী সুমন ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক কার্যের মাধ্যমে তার পায়ুপথ ও তলপেটে লুকিয়ে রাখা ডিম্বাকৃতির পেস্ট গোল্ডের প্যাকেট বের করতে থাকেন। এ সময় অভিযুক্ত মোট ১৩টি ডিম্বাকৃতি গোল্ড প্যাকেট বের করে নিজ হাতে ধুয়ে দেন। ওজন করা হলে প্রতিটি প্যাকেটে ২৩২ গ্রাম করে মোট ৩ কেজি ১৬ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যায়।

এছাড়াও যাত্রীর পরিহিত পোশাকের পকেট থেকে আরও একটি গোল্ডবার (১১৬ গ্রাম) এবং ৯৯ গ্রাম স্বর্ণালংকারসহ মোট ৩ কেজি ২৩১ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। পেস্ট গোল্ড সহ অন্যান্য গোল্ডের রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ধারকৃত পদার্থ স্বর্ণ বলে জানা যায়। এই স্বর্ণের আমদানি এবং শুল্ক পরিশোধের কোনও ধরনের রশিদ তিনি এসময় দেখানে ব্যর্থ হন। তিনি স্বীকার করেন, স্বর্ণ পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে স্বর্ণ পাচারের চেষ্টা করছিলেন। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শারজাহ প্রবাসী মিজান ও আনোয়ার তাকে এসব সোনা দেন।

মো. সুমন হোসেন মুন্সীগঞ্জ সদরের বাসিন্দা, তার বাবার নাম ইসমাইল হাওলাদার। ব্যাগেজ সুবিধা ব্যবহার করে পণ্য আমদানির জন্য তিনি নিয়মিত বিদেশে যাওয়া-আসা করেন। তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।