‘বাবাকে কবর দেওয়ার পর থেকে আজও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি’

‘আমার বাবাকে যখন কবর দেওয়া হয়, এরপর থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আজও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আমি যেন শেষ সাংবাদিকের মেয়ে হই। আমার মতো কোনও সাংবাদিকের মেয়েকে যেন আর রাস্তায় না দাঁড়াতে হয়।’

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বন্ধ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে সমাবেশে এমন আকুতি জানিয়েছেন বাংলানিউজের জামালপুর প্রতিনিধি নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।

সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

নিহত সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে জান্নাত বলেন, আমার বাবার ওপর আগেও হামলা হয়েছে কিন্তু সেই হামলার কোনও বিচার আমরা পাইনি। আমার বাবা যদি সেই হামলাগুলোর বিচার পেতেন, তাহলে তাকে আজ অকালে যেতে হতো না। আমার বাবার ওপর এতগুলো হামলার মূল কারণ ছিল আমার বাবা স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোক। তিনি সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতেন। এই সংবাদ প্রকাশের জেরেই আমার বাবার ওপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে। তখন আমার বাবা থানায় জিডিও করেছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবার থেকে যে মামলা করা হয়, তাতে আগের সেই জিডিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

নাদিম হত্যা মামলায় শুধু সিসিটিভিতে ফুটেজের ওপর নির্ভর করলে হবে না, সিসিটিভির বাইরে অনেক ঘটনা আছে, এমন কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক নাদিমের কন্যা জান্নাত বলেন, সিসিটিভির বাইরে যে পরিকল্পনাকারী খলনায়িকা ও খলনায়ক আছেন, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে তারা বিভিন্নভাবে মামলাকে প্রভাবিত করছে এবং সামনে আরও করবে।

সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহাসান বুলবুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার তদন্তকারী সংস্থা ওই মামলাটির জন্য ১০২ বার সময় নিয়েছে। তাহলে আমাদের বুঝতে বাকি নেই যে তারা কেমন তদন্ত করছে। আর কেনই বা এই তদন্ত এখনও শেষ হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার নেপথ্যে যারা আছেন, তাদের সর্বপ্রথম গ্রেফতার করতে হবে। আর মামলার এজহারভুক্ত সব আসামিকে এখনই আইনের আওতায় আনতে হবে। এমনকি নাদিম হত্যার ওই সিসিটিভির ফুটেজ শুধু নয়, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের নির্দেশদাতাদেরও দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।

সাংবাদিক হত্যার কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, সাংবাদিক হত্যার সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দেশে ও দেশের বাইরে নষ্ট হয়েছে। তাই দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সাগর-রুনি, নাদিমসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে হবে এবং এসব হত্যার পেছনে যারা কলকাঠি নাড়িয়েছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব দ্বীপ আজাদ, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু প্রমুখ।