যে কারণে বন্ধের দিনেও বসলো হাইকোর্ট বেঞ্চ

ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৩১ হাজার টন কয়লা নিয়ে সম্প্রতি মোংলা সমুদ্রবন্দরে আসে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি পানাগিয়া কানালা। এর আগে সিঙ্গাপুরে একটি চীনা কোম্পানির মাধ্যমে জ্বালানি তেল নিলেও মূল্য পরিশোধ করেনি এমভি পানাগিয়া কানালা। ফলে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের পর জাহাজটির বিরুদ্ধে আটকাদেশ চেয়ে মামলা করেন ওই চীনা কোম্পানির প্রতিনিধি। এতে আটকে যায় জাহাজটির ফিরে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া। এদিকে মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় ছুটির দিনে কোর্ট বসে এবং প্রত্যাহার করা হয় আটকাদেশ।

জানা গেছে, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি পানাগিয়া কানালা বাংলাদেশে আসার পথে সিঙ্গাপুরে  চীনের সিসিএক্স শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে  জ্বালানি তেল নেয়। কিন্তু জ্বালানি বাবদ মূল্য পরিশোধ না করেই কয়লাবাহী জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের পর সিসিএক্স শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে আবুল হাসান নামে তাদের এক প্রতিনিধি বাদী হয়ে জাহাজটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় জ্বালানির মূল্য বাবদ ২ কোটি ৯৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৮২ দশমিক ৬৬ টাকা দাবি করা হয়। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুলাই বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ জাহাজটি আটকের আদেশ দেন। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাহাজটি যাতে বাংলাদেশের জলসীমা ত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে হাইকোর্টের আদেশের পর মামলার বাদী ও জাহাজ মালিকের মধ্যে গত ১৪ জুলাই সমঝোতা চুক্তি হয়। সে অনুসারে জাহাজের মালিক একটি ব্যাংক হিসাবে বাদীর পাওনা অর্থ জমা রাখবেন। লন্ডনে সালিশের মাধ্যমে পাওনা দাবি নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি হবে বলে জানানো হয়। সেই চুক্তি অনুসারে বাদীপক্ষ রবিবার (১৬ জুলাই) মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য হাইকোর্টে লিখিত আবেদন দেবেন বলেও জানানো হয়েছিল।

তবে এরই আগে শনিবার (১৫ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হাইকোর্ট বেঞ্চ বসেন এবং জাহাজটির ওপরে দেওয়া আটকাদেশ প্রত্যাহার করেন।

আদালত সূত্র জানায়, আটকাদেশের বিষয়ে শুনানির সময় জাহাজে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা থাকার বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়নি। তাই জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জ্বালানি তেল সংক্রান্ত জটিলতায় জাহাজটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাই বাদীপক্ষের আবেদনের কারণে পাওয়া অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি জাহাজটি আটক রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। তবে জাহাজে জ্বালানি হিসেবে কয়লা থাকার গুরুত্ব বিবেচনায় শনিবার (১৫ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হাইকোর্ট (এডমিরালটি বেঞ্চ) বসে আগের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সারা বিশ্বেই সব এডমিরালটি কোর্ট সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টার যেকোনও সময় বসতে পারে। সে অনুসারে শনিবার হাইকোর্টের বেঞ্চটি মামলাটির শুনানি নিয়ে জাহাজটির ওপর আগের জারিকৃত আটকাদেশ প্রত্যাহার করেছেন। একইসঙ্গে আজ রবিবার বাদীপক্ষ মামলাটি তুলে নিয়েছেন। ফলে জাহাজটির দেশত্যাগে কোনও বাধা রইলো না।’

মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় হাইকোর্ট যেকোনও সময় যেকোনও স্থানে বসে মামলা শুনে বিচার করতে পারেন এবং আদেশ দিতে পারেন— এমন অনেক নজির রয়েছে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম।