ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে শতাধিক চুরি ছিনতাই ডাকাতি

ঈদুল আজহার ছুটিতে রাজধানীতে শতাধিক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশের একজন সদস্য। যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনা এড়াতে কাজ করছেন তারা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটির চার দিনে রাজধানীর ৫০টি থানায় শতাধিক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগ এসেছে। বাড্ডা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা, রামপুরায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন গণমাধ্যমকর্মী। ফার্মগেটে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে পুলিশ কনস্টেবল নিহতের ঘটনা কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের। পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও অন্যান্য ঘটনায় অপরাধীদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ঈদের ছুটির প্রথম দিন গত ২৭ জুন বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার (গুদারাঘাট) ৪ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির তিন তলার ফ্ল্যাটে ডাকাতি হয়েছে। বাড়ির মালিক মীর ইসহাক আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকাত দল ঘরের ভেতর ঢুকেই সবাইকে বেঁধে ফেলে। ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ ১১ লাখ টাকা এবং ৩৩ ভরি সোনার গহনা নিয়ে যায় ডাকাতরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তার জন্য অনেক কষ্টে ১১ লাখ টাকা জোগাড় করেছিলাম। ডাকাতরা গলায় ছুরি ধরে ৮ মাস ধরে তিল তিল করে জমানো টাকা নিয়ে গেছে।’

বাড্ডা থানায় ডাকাতির মামলা দায়েরে পর তদন্ত করছে পুলিশ। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধী শনাক্ত করার কাজ চলছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।’

ঈদের দিন কাজ শেষে রাতে বাসায় ফেরার পথে রামপুরা এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন গণমাধ্যমকর্মী রানা। তিনি বলেন, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন তিনি। তিন জন ছিনতাইকারী মিলে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দিলে তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়।

ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি শেরপুর থেকে কর্মস্থল তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেওয়া জন্য ঢাকায় আসেন পুলিশ কনস্টেবল মুনিরুজ্জামান তালুকদার। ভোরে ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম সবুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত চার জনের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে কেউ থানায় অভিযোগ জানায় না। সে কারণে ঘটনাগুলো সব উঠে আসে না। থানায় অভিযোগ জানালে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অপরাধীদের গ্রেফতার করা সহজ হয়। চলতি পথে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা এড়াতে থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন তারা।

শনিবার (১ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা রাত এবং ভোর রাতকে ছিনতাইয়ের সময় হিসেবে বেছে নেয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশি কৌশল, তৎপরতা, পেট্রোলিং কীভাবে বাড়ানো যায়, সেসব বিষয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’

রবিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘রাজধানী ফাঁকা থাকায় পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ড এবং ডাকাতির ঘটনা— দুটিই অনাকাঙ্ক্ষিত। মনে করি, এ ধরনের ঘটনা হওয়া উচিত হয়নি। নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও দুর্বলতা ছিল কিনা, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখতে ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে। তিনি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’