তেজগাঁওয়ে নারী-পুরুষের মরদেহ

কী হয়েছিল সেই প্রাইভেটকারে

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়ি এলাকায় একটি প্রাইভেটকার থেকে বুধবার (৭ জুন) সকালে দেলোয়ার হোসেন মোল্লা (৫৩) ও মৌসুমী আক্তার রানী (৪২) নামে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ঘটনার পেছনের কারণ, কীভাবে এটি ঘটলো, তারা কীভাবে একসঙ্গে মারা গেলো—এসব নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা সন্দেহ, সংশয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি।

যদিও তদন্ত সূত্রের ধারণা—গাড়িতে অক্সিজেনের অভাব অথবা যৌন উত্তেজক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে। ওই প্রাইভেটকার থেকে আলামত সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মৃত ওই দুই ব্যক্তির স্বজনদের বরাত দিয়ে তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মৃত মৌসুমী আক্তার রানীর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায়। পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না। মৌসুমীর পরিবারের সদস্যরাও জানতো না সে কোথায় থাকতো। তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে অনেক দিন আগে। ওই সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে, তারা উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর দুই সন্তান তাদের খালার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরায় থাকে। মৃত মৌসুমীর ভাই আমাদের জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বোনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল না। কোথায় থাকতো, কী করতো কোনও কিছুই তারা জানতো না।

অপরদিকে মৃত দেলোয়ার হোসেন মোল্লার স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, দেলোয়ার হোসেন মোল্লার গ্রামের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসএসএফ অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেলোয়ার প্রায়ই মদ্যপান করতেন। অস্বাভাবিক আচরণ ও বেপরোয়া চলাফেরা করতেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

মরদেহ উদ্ধারের সময় ওই নারীর একটি ভ্যানিটি ব্যাগ পাওয়া যায়, সেখানে কিছু কনডম পাওয়া গেছে। বাকিটা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম।

এ ঘটনায় বুধবার (৭ জুন) মৃত দেলোয়ার হোসেন মোল্লার ছোট ভাই মিন্টু মোল্লা (৩৮) তেজগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসএসএফ অফিস সহায়ক হিসাবে কর্মরত ছিলেন দেলোয়ার হোসেন মোল্লা। ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক সাড়ে পাঁচটার দিকে আমার ভাবি আমাকে জানান, এসএসএফ স্টাফ শহীদ ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় খেয়াল করে স্টাফ কোয়ার্টারের পুকুরপাড়ের উত্তর-পশ্চিম কোণে কাপড় দিয়ে ঢাকা একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-০৭২৫) ইঞ্জিন চালু অবস্থায় রাখা। কৌতূহলবশত তিনি প্রাইভেটকারটির কাপড় সরিয়ে দেখেন গাড়ির ভেতরে আমার বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন মোল্লা ও অজ্ঞাতনামা একজন নারী মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ঘটনা শুনে আমি ও ভাবি তাৎক্ষণিক ওই প্রাইভেটকারটির কাছে যাই। গাড়িটির কাপড় সরিয়ে দরজা খুলে আমার বড় ভাই এবং অজ্ঞাতনামা নারীকে দেখতে পাই। পরবর্তী সময়ে আমি ড্রাইভ করে প্রাইভেটকারটি এসএসএফ-১ স্টাফ কোয়ার্টারের নিচে নিয়ে আসি এবং আমার ভাবি বিল্ডিংয়ের সভাপতিকে জানালে তারা আমার ভাইয়ের অফিসে বিষয়টি জানায়।

মামলায় আরও বলা হয়, পরে বড় ভাইয়ের সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে এবং পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এবং সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মকর্তারা এসে ঘটনাস্থল ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার সময় অজ্ঞাতনামা নারীর কাছে একটি মোবাইল ফোন পায়। সেই মোবাইল ফোনে থাকা নাম্বারে ফোন করে জানতে পারি যে ওই নারীর নাম মৌসুমী আক্তার রানী (৪২)। ধারণা করছি—আমার ভাই ভোর রাত আনুমানিক ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে যেকোনও সময় ওই নারীর সঙ্গে প্রাইভেটকারের ভেতরে থাকা অবস্থায় মারা যায়।

এর আগে ঘটনার দিন সকাল সাড়ে সাতটায় সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে থাকা প্রাইভেটকারের পেছনের সিটে দুজনের উলঙ্গ অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময়ে গাড়িটির ইঞ্জিন চালু অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় তেজগাঁও থানা পুলিশ।