‘তাদের দোকানের সঙ্গে পুড়েছে আমাদের কপালও’

ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে। দুপুরের পরে নিউ সুপার মার্কেটের সামনে পানি-কাদায় ভরে আছে। ফুটপাতজুড়ে হকাররা দাঁড়ানো। মার্কেটের নিচে তাদের মালামাল রাখা ছিল, সেগুলো এখন সবই নষ্ট। হকারদের সঙ্গে আছেন সড়কের সিগন্যালে, যানজটে যারা মালামাল বিক্রি করেন তারাও। তাদের কেউ কেউ অন্য সিগন্যালে গিয়ে জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি।

ভ্রাম্যমাণ এই বিক্রেতাদেরই একজন রুবেল। নিউ মার্কেটের সামনের সিগন্যালে রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় ছোট ছোট জিনিস বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের এক সপ্তাহ এই এলাকায় বিক্রি বেশি। ঢাকার মানুষ যারা গ্রামে যাবেন না, তারা শেষ সপ্তাহে বাজারে আসেন। আমাদেরও চাহিদা থাকে এই সপ্তাহে বাড়তি ইনকামের। সকাল থেকে বসে আছি। পুরা এলাকা খাঁ-খাঁ। কবে মার্কেট খুলবে, আর কবে লোকজন আসবে। যাদের দোকান পুড়েছে, তারা পথে বসেছে। আমাদেরও কপাল পুড়েছে।’

হেডফোন, মোবাইলের কাভারসহ আনুষঙ্গিক নানান জিনিস নিয়ে সিগন্যালে বিক্রি করেন ২১ বছর বয়সী শফিক। তিনি সারা দিনই এখানকার হকারদের জিনিস সরানোর কাজ করছেন। এই তরুণ বলেন, ‘সকালে আগুনের খবর শুনে বাইর হইয়া আসছি বাসা থেকে। মালামাল সাথে আনি নাই। কিন্তু পেছনের দু-একটা সিগন্যালে গিয়ে বুঝতে পারছি, দাঁড়াতে দিবে না। ওখানে যারা আমার মতো একই জিনিস বিক্রি করে, তাদের সিন্ডিকেট আছে। এখন দেখি, ঈদের আগে কী ব্যবস্থা করতে পারি। আজকে ফুটপাতের ভাইদের জিনিস সরাইতে হাত লাগাইলাম। তারা ইফতার করাবে।’

শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার তথ্য জানায়। তবে সন্ধ্যার সময়ও মার্কেটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পুরোপুরি আগুন নেভাতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

নিউ সুপার মার্কেটে আগুন (4)

পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও আগুনের কারণে শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল থেকে আশপাশের চাঁদনী চক ও গাউছিয়া মার্কেটও বন্ধ রয়েছে।

নিউ মার্কেট ও এর আশপাশের এলাকায় ঠিক কত সংখ্যক হকার ফুটপাতে বসেন, আর কত জন সিগন্যালে পণ্য বিক্রি করেন; তার হিসাব পাওয়া যায়নি। এমনকি এখানকার হকাররাও সেই হিসাব মিলিয়ে বলার পরিস্থিতিতে নেই। এসব এলাকায় সারা দিনই তারা উপস্থিত থেকে হা-হুতাশ করেছেন। এই আগুন ঈদের আগে তাদের কপাল পুড়িয়েছে। মার্কেটের ঠিক নিচেই বাইরের দিকে দোকান করতেন রমিজুল। তিনি বলেন, ‘এখানে যাইতে আইতে হাতের নাগালে প্রয়োজনীয় জিনিস মানুষ হাতে তুলে নিয়ে যায়। ঈদের আগে আবার কবে সেই ভিড় হবে কিনা কে জানে? এত বড় ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে? আবার নতুন করে শুরু করা মানে আবার মানুষের কাছে হাত পাতা।’