মেজর মান্নানের বিরুদ্ধে ১৭৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেডের (বিআইএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিআইএফসি থেকে ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে ১৪ কোটি ৩১ লাখ ১৯ হাজার ২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলাটির অনুমোদন দেয় দুদক।

এর আগে এ প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরও আটটি মামলা করে দুদক। এ পর্যন্ত ৯টি মামলায় প্রায় ১৭৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনে দুদক।

আগামী সপ্তাহের যেকোনও দিন মামলাটি করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক আব্দুল মাজেদ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মেজর এম এ মান্নান রাজনৈতিক দল ‘বিকল্প ধারা’র মহাসচিব। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেডের (বিআইএফসি) চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এসব টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে। মামলাগুলোয় তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

নতুন করে অনুমোদন দেওয়া মামলায় মেজর মান্নানসহ অন্য আসামিরা হলেন—বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মান্নান, উইনওয়্যার লিমিটেড ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রফিক উদ্দিন, বিআইএফসির পরিচালকদের মধ্যে তানজিল মান্নান, আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, এ এন এম জাহাঙ্গীর আলম , মহিউদ্দিন আহমেদ, রোকেয়া ফেরদৌস, ম্যাক্সনেট অনলাইনের প্রোপাইটর রইস উদ্দিন আহমেদ, বিআইএফসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহমুদ মালিক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুর রহমান, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ফকরে ফয়সাল, সাবেক এভিপি ও ইউনিট হেড আহমেদ করিম চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র অফিসার (বিজনেস) মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও সাবেক এভিপি ও ইউনিট হেড মো. আওলাদ হোসেন।

নতুন করে অনুমোদন দেওয়া মামলায় বলা হয়, বিআইএফসির অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যের সহায়তায় প্রতারণামূলকভাবে মামলার আসামি রফিক উদ্দিনের নামে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে গ্রাহকের কাছে পাওনা ১৪ কোটি ৩১ লাখ ১৯ হাজার ২৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট প্রথম মেজর এম এ মান্নানসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। একটি মামলায় আত্মসাতের পরিমাণ দেখানো হয় ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। দ্বিতীয় মামলায় আত্মসাতের পরিমাণ দেখানো হয় ২৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৪ টাকা। তদন্ত শেষে মামলা দুটির চার্জশিটও দিয়েছে দুদক। বর্তমানে এই দুই মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।

তৃতীয় মামলাটি করা হয় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর। এ মামলায় আত্মসাতের পরিমাণ দেখানো হয় ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার ১২৩ টাকা। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। চতুর্থ মামলা করা হয় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর। এ মামলায় আত্মসাৎ দেখানো হয় ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯২ টাকা। এর কয়েক দিন পর ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর পঞ্চম মামলাটি করা হয় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে। মামলায় আত্মসাৎ দেখানো হয় ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ৭০৫ টাকা।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ছয় নম্বর মামলাটি করে দুদক। এ মামলায় আত্মসাতের পরিমাণ দেখানো হয় ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৭ টাকা। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি একই আইনে সপ্তম মামলাটি করা হয়। সেখানে আত্মসাৎ দেখানো হয়েছে ৩৭ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬৭ টাকা। আট নম্বর মামলাটি করা হয় ২০ মার্চ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে। এ মামলায় আত্মসাৎ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকা। প্রতিটি মামলায় মেজর মান্নানসহ ১১ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে আদালতে। বাকি মামলাগুলো তদন্ত শেষে পর্যায়ক্রমে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।