দেশি ফলে উৎসাহ সরকারের

রমজানকে সামনে রেখে ফলের বাজার চড়া

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশি-বিদেশি ফলের দাম। ভারত থেকে আমদানি করা এক ক্যারেট ২০ কেজির এফসি সাদা আঙুর পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয় ৩৬০০ টাকা। যা খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ৪০০ টাকার ওপরে। কালো আঙুর ১০ কেজির এক ক্যারেট ২৪০০ টাকা। যা খুচরা বাজারে ৫০০ টাকা। বড় ২০ কেজির এক ক্যারেট আনার ৫৬০০ টাকা। যার কেজি পড়ে ২৮০ টাকা। মাঝারি সাইজের আনার ২৫০ টাকা কেজি। অন্যদিকে ছোট আনার ২১০ টাকা কেজি পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়।

পুরান ঢাকা ও মগবাজার-কলাবাগান এলাকার কয়েকজন ফলের ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, দেশি-বিদেশি ফলের দাম বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারা, বিদেশি ফল আসা কমে যাওয়ায় দেশি ফলের ওপর প্রভাব পড়েছে। যে কারণে দেশে উৎপন্ন ফলের দামও বেড়েছে সমানতালে।IMG_20230213_154416

মগবাজার মোড়ের পাশে ফলের দোকান নিয়ে বসেন জাকির। তিনি বলেন, ‘বিদেশি ফল আসতেছে না। কম আসায় দেশি ফলের ওপর চাপ বেড়েছে। রমজানে কলার দাম বেড়ে যাবে অনেক।’

সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশি ফল বাদ দিয়ে দেশি ফলের ওপর জোর দেওয়ার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বক্তব্যে দেশি ফল গ্রহণে উৎসাহ দিয়েছেন। গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ফল তো আমাদের দেশে প্রচুর হচ্ছে। এখন আমাদের দেখতে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায় অতিরিক্ত চাপ যেন না পড়ে। এছাড়া দেশে যে ফল উৎপাদন হচ্ছে, সেসবেরও একটি মূল্য পাওয়া দরকার। যে জন্য এটি (এলসি) একটু সীমিত করা হয়েছে। সময় ভালো হলেই বিদেশ থেকে ফল আমদানির পথ খুলে দেওয়া হবে। আপাতত দেশীয় ফলমূলের ওপর ভরসা করার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী।

এসময় মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ডলার সংকট না কাটলে এবারের রমজানেও বিদেশি ফল আমদানি করা যাবে না ।

রাজধানীর একাধিক বাজার সরেজমিন দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে আগের তুলনায়। পাইকারি যে আনার ২৫০ টাকা কেজি, তা খুচরা বাজারে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমলা পাইকারি যা ১৫০-১৬০ টাকা, তা খুচরা দোকানে ৩০০ টাকা। আপেল ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও পাইকারি তা মাত্র ১৬০ টাকা। পাইকারির দ্বিগুণের বেশি দামে খুচরা বাজারে আঙুর (৪০০ টাকা) বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারের আশপাশে যারা ফুটপাতে বা ভ্যানে করে ফল বিক্রি করছেন, তারা খুচরা দোকানের চেয়ে অনেক কম মূল্য নিচ্ছেন।IMG_20230213_173929(1)

এবার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খেজুরের দাম। পাইকারি বাজারে তিন কেজি মাবরুম ভিআইপি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩২০০ টাকা। তিন কেজি কালমি খেজুর ১৭০০ টাকা। আম্বার চার কেজি ৩০০০ টাকা। আজোয়া তিন কেজি ২৪০০ টাকা। বারমি ১০ কেজি ১৬০০ টাকা। জিহাদি খেজুর ১০ কেজি ১২৫০ টাকা। বরই খেজুর ২০ কেজি ২২৫০ টাকা। খুচরা দোকানে পাইকারি মূল্যের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

পুরান ঢাকার একটি বাজারে ফল কিনতে আসা আমজাদ হোসেন (৪৬) বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফলের দাম। বাসায় ছোট দুই বাচ্চা আছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অল্প করে ফলমূল কিনতে হয়। একটু ফলমূল না খাওয়াতে পারলে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে।’

সদরঘাটের খুচরা ফল বিক্রেতা মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘ফলের দাম বাড়া কমায় খুচরা দোকানদারদের হাতে কিছু নাই। আমরা তো কেনার ওপর বেচাবিক্রি করি। ফলের দাম বেশি এটা সবাই জানে। যারা আড়তদার তারা জানে দাম বেশি কেন। আমরা আহামরি কখনও লাভ করি না। কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ বিশ-ত্রিশ টাকা লাভ করি। আমাদেরও তো সংসার চালাতে হয়।।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের মধ্যে ২০২২ সালের মে মাসে সব ধরনের বিদেশি ফল আমদানিতে ২০% নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ফল আমদানিতে ঋণ সুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই শুল্ক আরোপের কারণেও বিদেশি ফলের দামে প্রভাব ফেলছে বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী।

ছবি: আতিক হাসান শুভ