নিউ মার্কেটের চার নম্বর গেটের কাছে পাশাপাশি দুটি ফাস্টফুডের দোকানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব থেকেই শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। একটি দোকানের হয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট আশরাফ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি নিউ মার্কেটের চার নম্বর গেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। তাদের কর্মচারীদের মধ্যেও ঝগড়া চলছিল। একটি দোকানের হয়ে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী অপর একটি দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে। ওই দোকানে ঢাকা কলেজের অংশীদারিত্ব রয়েছে কিনা, তা আমরা এখনও নিশ্চিত না। আমরা জানার চেষ্টা করছি।’
আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘নিউ মার্কেটের ফাস্টফুডের দোকানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল, তাদের ওপর আক্রোশ থাকবে, কিন্তু এই এলাকার ২২টি মার্কেট কী ক্ষতি করেছে। সেগুলোতে কেন ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতের সংঘর্ষের পর আমরা মার্কেটের কোনও দোকান মঙ্গলবার সকালে খোলা রাখিনি। বন্ধই ছিল। তারপরও অভিযোগ উঠেছে, আমরা নাকি শিক্ষার্থীদের মারধর করেছি। আমরা তো ছিলামই না। আমাদের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, হকার্স মার্কেটসহ বেশি কয়েকটি মার্কেটে আগুন দেওয়া হয়েছে। দোকান ভেঙে ক্যাশবাক্স নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এসব দেখেছি। আমরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন আল্লাহর ভরসায় আছি। আর কিছু করার নেই। আমাদের সবার এটিচুড ঠিক করা উচিৎ।’
তিনি দোকান দুটির নাম তাৎক্ষণিক বলতে পারেননি। তবে এবিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে টানা ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী সংঘর্ষে নিউমার্কেট এলাকা থমথমে। ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ হল বন্ধ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীরা হলে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। তারা মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় মিরপুর সড়কে অবস্থান করছিল। অপরদিকে, ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও পুলিশও নিউ মার্কেটের ফুটওভার ব্রিজের ওপাশে অবস্থান নিয়ে আছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা কলেজে আসেন। তবে তারা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে পারেননি। উল্টো তোপের মুখে পরেছেন।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন, ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় আজকে এই পরিস্থিতি হয়েছে। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই শিক্ষার্থীদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, কমিটি থাকলেও আজকে আবার সবাইকে বহিষ্কার করতে হতো।
সংঘর্ষ অব্যাহত রাখতে তৎপর একটি গ্রুপ
ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ জিইয়ে রাখতে দুদিক থেকেই একটি গ্রুপ তৎপর রয়েছে। তারা কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে বারবার বলার চেষ্টা করেছে, ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সরিয়ে দিলে তারাও চলে যাবেন, কিন্তু পুলিশ দোকান কর্মচারীদের একবারও সরে যেতে বলেনি। উল্টো পুলিশ যখন শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়, তখন তাদের পেছনে দোকান কর্মচারীরাও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়।
শিক্ষার্থীদের হল না ছাড়ার ঘোষণা
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় ইফতারের পর শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে থাকার প্রতিজ্ঞা করে।
অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হচ্ছে সংঘর্ষে
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, বাংলা কলেজসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অনেকে যুক্ত হয়েছে। তারা মিরপুর সড়কে মিছিল করেছে। আজ রাতে যদি সংঘর্ষের সমাপ্তি না ঘটে তাহলে বুধবার এই সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৪১ আহত, দুজন আইসিউইতে, নিহত এক
ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪১ জন আহত হয়েছেন। আইসিইউতে থাকা একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম নাহিদ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চলছে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা ওই এলাকা ছাড়বে না। অপরদিকে রাত হয়ে গেলেও মঙ্গলবার দোকান মালিক, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরাও ওই এলাকা ছাড়ছে না। দুই গ্রুপই মনে করছেন, এলাকা ছাড়লে তাদের পরাজয়। এমন ইগো নিয়ে তারা অবস্থান করছে এখন। পুলিশ বলছে প্রয়োজন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে
টানা ২৪ ঘণ্টা নিউমার্কেট এলাকা ও এর আশপাশে অবস্থান করছে প্রায় দুই শতাধিক পুলিশ। সংঘর্ষের শুরু থেকে ডিএমপির রমনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও স্পটে রয়েছেন। পুলিশ শিক্ষার্থীদের বারবার ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে, ফের তারা সংঘবদ্ধ হয়েছে। পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করায় ছাত্ররা কিছুক্ষণ শান্ত থাকলেও তারা ফের চড়াও হচ্ছে। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।