আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ ও নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিন সুলতানা সামশাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার।
পরে আইনজীবী দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন বলেন, এমপি হারুনের পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। সংবিধানের ৬৬(২)(খ) বলা আছে, কোনও সংসদ সদস্য এ পদের অযোগ্য হবেন যদি ফৌজদারি মামলায় তিনি অন্যূন দুই বছর দণ্ডিত হন। সেখানে হারুন অর রশীদ পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। সে কারণে জনস্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ এ রিট দায়ে করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এমপি হারুন দণ্ডিত হওয়ার রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিচারিক আদালত রায়ের অনুলিপি সংসদ সচিবালয়ের সচিব বরাবরে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা এই বিষয়ে কোনেও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমরা একটি আইনি নোটিশ দিয়েছিলাম। তবে সে নোটিশের কোনও সাড়া না পেয়ে গত ১৩ আগস্ট এ রিট দায়ের করা হয়।’
এর আগে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এমপি হারুনসহ তিন জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক ইউনুস আলী। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, হারুন বিএনপি জোট সরকারের সময় এমপি থাকাকালে ২০০৫ সালে ব্রিটেন থেকে একটি হ্যামার ব্র্যান্ডের গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ক্রয় করেন। গাড়িটি তিনি পরে ইশতিয়াক সাদেকের কাছে ৯৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর সাদেক গাড়িটি চ্যানেল নাইনের এমডি এনায়েতুর রহমান বাপ্পীর কাছে বিক্রি করেন।
নিয়ম অনুযায়ী, শুল্কমুক্ত গাড়ি তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করলে শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু এমপি হারুন শুল্ক না দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
তাই ওই মামলায় ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এমপি হারুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ মামলার পলাতক আসামি চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার অপর পলাতক আসামি ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৪০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় এমপি হারুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন হারুন অর রশীদ। হারুন অর রশীদের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের একক বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে দুদকের আবেদনের আপিল বিভাগ তা বহাল রাখার পর হারুন অর রশীদ মুক্তি পান।