সামাজিক দূরত্ব মেনে ইফতার বিক্রি শুরু, ক্রেতা কম

3করোনা পরিস্থিতির কারণে রোজার শুরু থেকে ইফতারের দোকান বসানোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি শিথিল করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) থেকে সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যবস্থা রেখে ইফতার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি। তবে এদিন খুব কম সংখ্যক রেস্তোরাঁ কিংবা দোকানকে ইফতার বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাও অনেক কম। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলছে, বুধবার থেকে একটি গাইডলাইন তৈরি করে পাঠানো হবে সব জায়গায়। এদিন থেকে আরও  বেশি রেস্তোরাঁ খুলবে এবং ইফতার বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারবে।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নির্দেশনায় বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর প্রতিষ্ঠিত রেস্টুরেন্ট/রেস্তোরাঁগুলো মঙ্গলবার থেকে ইফতারি প্রস্তুত করে বিক্রি করতে পারবে। তবে কেউ ফুটপাতে কোনও ধরনের ইফতারির পসরা বসিয়ে প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। নগরবাসী প্রতিষ্ঠিত রেস্টুরেন্ট/রেস্তোরাঁ থেকে ইফতারি ক্রয় করতে পারবেন। তবে রেস্টুরেন্ট/রেস্তোরাঁয় বসে ইফতার গ্রহণ করতে পারবেন না। ইফতারি বিক্রেতা এবং ক্রেতা সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

1ডিএমপি থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসার পর মঙ্গলবার অনেক রেস্তোরাঁ ইফতার বিক্রির ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি। রাজধানীর সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ দেখা গেছে।

কলাবাগানের মামা হালিম মঙ্গলবার খুলেছে নির্দেশনা আসার পর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাগ কেটে দেওয়া হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। ক্রেতারা যেন নির্দিষ্ট দাগে দাঁড়িয়ে হালিম কিনতে পারে। এই দোকানে হালিম ছাড়া অন্য কোনও ইফতার সামগ্রীর ব্যবস্থা নেই। মামা হালিমের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা দোকানের সামনে তিন ফুট দূরত্ব রেখে ঘর কেটে দিয়েছি। এছাড়া কাস্টমারদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হচ্ছে। আমরা রমজান মাসে আজকেই দোকান খুলেছি, তবে কাস্টমার অনেক কম।’ 

5মামা হালিম থেকে কিছুদূর এগিয়ে ধানমন্ডি ছয় নম্বর রোডে অবস্থিত ওয়েসিস ফাস্ট ফুড নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইফতার বিক্রি চালু রেখেছে প্রথম রোজা থেকেই। দোকানের ভেতরে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাগ কেটে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। দোকানের বাইরের অংশে বিল্ডিংয়ের ভেতরেই বিক্রি হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। সেখানেও ঘর আঁকা আছে। এছাড়া বিক্রয় প্রতিনিধিরা একটু পর পর ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে দাঁড়ানোর জন্য বলছেন।

ধানমন্ডি দুই নম্বর রোডের স্টার কাবাবও খোলা আছে প্রথম রোজা থেকে। দুপুর থেকে সীমিত ইফতার বিক্রি করে থাকে তারা। মঙ্গলবার স্টার কাবাবের সামনে দেখা যায়, নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতারা। স্টার কাবাবের নিরাপত্তা কর্মীরা একজন একজন করে ক্রেতাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। এখানে রেস্টুরেন্টের বাইরেও ফুটপাতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

2স্টার কাবাবের ম্যানেজার নুরুদ্দিন জানান, প্রথম রোজা থেকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে শুধু ইফতার বিক্রি করছি। ক্রেতারা শুধু পার্সেল নিতে পারবেন। এখানে বসে খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা আছেন, তারা বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

সাত মসজিদ রোডের অল্প কয়েকটি রেস্তোরাঁ খোলা থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে আছে লায়লাতি, সুলতান্স ডাইন এবং দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জ। সুলতান্স ডাইন ঝিগাতলায় একটি বিল্ডিংয়ের দোতলায় অবস্থিত। এ কারণে নিচের গেট থেকে পার্সেল সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছে তারা। লায়লাতি তাদের দোকানের সামনে দড়ি টানিয়ে জায়গা করে দিয়েছে ক্রেতাদের দাঁড়ানোর জন্য। সেখানে লেখা আছে— দূরত্ব বজায় রাখুন। লায়লাতির ব্যবস্থাপক জানান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে আমরা খাবার বিক্রি করছি। খুব সীমিত সংখ্যক খাবারের ব্যবস্থা করেছি। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত আমরা বিক্রি করবো।

4দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জ ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছে প্রথম রোজা থেকেই। বিল্ডিংয়ের নিচে সিঁড়ির সামনে ইফতার বিক্রির ব্যবস্থা রেখেছে তারা। এই বিল্ডিংয়ে আরও কয়েকটি রেস্তোরাঁ থাকলেও শুধুমাত্র সিক্রেট রেসিপি নামক রেস্তোরাঁটি খোলা আছে। তারা শুধু পার্সেল বিক্রি করছে।

ফরেস্ট লাউঞ্জের জেনারেল ম্যানেজার পলাশ ফকির বলেন, ‘আমরা সিকিউরিটি দিয়ে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইফতার বিক্রি করছি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য আমাদের সিকিউরিটি গার্ডরা দেখছেন। এছাড়া, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। আমাদের সেলসম্যানরা একটু পর পর ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বলছেন।’

6বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলছে, মঙ্গলবার অনেকে রেস্তোরাঁ চালু করতে না পারলেও বুধবার থেকে অনেকেই খুলবে। সংগঠনটির সভাপতি রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গতকালই মাত্র নির্দেশনা পেলাম। আজকে অনেকেই রেস্টুরেন্ট খুলতে পারেননি। তবে আগামীকাল থেকে খুলবে অনেক এলাকায়। তাদের স্বাস্থ্যবিধিসহ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আমরা একটি গাইডলাইন পাঠাবো। সেটি মেনেই তারা ইফতার বিক্রি করবেন এবং শুধু পার্সেলের ব্যবস্থা রাখা হবে। আমাদের এখন রেস্তোরাঁগুলোতে লোকবল কম, তাছাড়া ক্রেতাও তো সেরকম নেই। তাই আশা করি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাবে। আমরা এই বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।’