ইসকন মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের

রাজধানীর ইসকন মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা করেছিল আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এই চক্রের পাঁচ সদস্য। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের যুগ্ম কমিশনার ইলিয়াস শরীফ এই তথ্য জানান।

পাঁচ জঙ্গি হলো−নিজাম উদ্দিন (২১), রায়হান ভূইয়া (২০), হানিফ উদ্দিন সুমন (১৯), শেখ ইফতেখারুর ইসলাম ওরফে আরিফ (২৫) ও মুফতি মুসলিম উদ্দিন ওরফে মুসলিম (২৭)।

ইলিয়াস শরীফ বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকার বালুর মাঠ থেকে রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে আনসার আল ইসলামের ৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি চাপাতি, তিনটি ব্যাগ ও চারটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা ইসকন মন্দিরে হামলা চালানোর জন্য পরিকল্পনা করছিল। গ্রেফতার ৫ জন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে একত্রিত হয়ে গোপন বৈঠক করেছে। এরআগে, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিগ্রাম, অনলাইন চ্যাট গ্রুপ ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। একই সঙ্গে অনলাইনে অর্থও সংগ্রহ করে।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের নভেম্বরে ইসকন মন্দিরে হামলার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল ওরফে উসমান গণি ওরফে আবু আইয়ুব আল আনসারী নামে এক কুয়েত প্রবাসী জঙ্গির তথ্য বেরিয়ে আসে। নাজমুল জঙ্গিবাদবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণ করায় নির্মাতা খিজির হায়াত খানকে হত্যার পরিকল্পনারীদের মধ্যে একজন ছিল।

নাজমুল কুয়েতে থাকা অবস্থায় ‌‘এসো কাফেলাবদ্ধ হই’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে ওই হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দেয়। এরপর সেখান থেকে দেশে ফিরে গ্রেফতার জঙ্গিদের সমন্বয়ের চেষ্টা এবং ইসকন মন্দিরে পুনরায় হামলার পরিকল্পনা করছিল। সিটিটিসির সদস্যরা নাজমুলকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আনসার আল ইসলামের জঙ্গি সদস্যরা বলেছে, তারা আনসার আল ইসলামের আদর্শের অনুসারী। সংগঠনের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে প্রশিক্ষণ নিতে তারা ঢাকায় এসেছিল। নাজমুলের আহ্বানে সাড়া দিয়েই তারা ঢাকায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। এদের সঙ্গে দুবাই প্রবাসী আরও এক জঙ্গি ছিল, যার নাম আবু কায়সার ওরফে রনি।

সেও ইসকন মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা ও খিজির হায়াত খান হত্যার পরিকল্পনায় ছিল। সে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আছে। তাকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছেন সিটিটিসির সদস্যরা।

গ্রেফতার জঙ্গিদের বিষয়ে সিটিটিসির কর্মকর্তা ইলিয়াস শরীফ বলেন, নিজাম উদ্দিন চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসায় চাকরি করে। রায়হান মালয়েশিয়ায় ছিল, কিছুদিন আগে দেশে আসে। হানিফ চট্টগ্রামের একটি শিপ ব্রেকিংয়ে চাকরি করে। ইফতেখারুল ইসলাম ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেরিনারি মেডিসিনের ওপর অনার্স মাস্টার্স করেছে, আর মুসলিম উদ্দিন ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে একটি মাদ্রাসায় চাকরি করে।