জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী ‘দক্ষিণ এশিয়ায় রাষ্ট্র এবং সমাজ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও গবেষক মেসবাহ কামাল।
সেমিনারটির আয়োজন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ ও ভারতের কলকাতার মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ।
মেজবাহ কামাল বলেন, দ্বিতীয় যুক্তি হলো– যদি হিন্দু সম্প্রদায় বিরোধিতাই করতো, সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সঠিক কাঠামোর মধ্যে আসেনি। আপনারা জানেন কি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখন বাংলা বিভাগ চালু করা হয়েছিল? ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০৫-০৬ সালের দিকে বাংলা বিভাগ চালু করে, যাতে প্রতিষ্ঠানটি একটি সঠিক কাঠামোর মধ্যে আসে। কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির মনে হয়েছিল যে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিক কাঠামো দেওয়া জরুরি, যাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় একই কথা চিন্তা করে। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কারা এসেছিল শিক্ষক হিসেবে? তাদের কয়জন মুসলমান ছিল? বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল, যারা কলকাতা থেকে এখানে এসেছিল।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে অনেক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের সামনে আছে। এগুলো থেকে উত্তরন সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে এবং দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ লাভজনক যেভাবে হয়। আমি শুধু বলতে চাই, আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপট ভাবতে হবে। ভারত যখন বলে – ‘বাংলাদেশি অভিবাসীরা ভারত আসছে’ আমি বলি বাংলাদেশি অভিবাসীরা বিশ্বের কোন দেশে যাচ্ছে না? পৃথিবীর যেকোনও দেশের কোনও একটা শহরে গেলে আপনি বাংলাদেশি পাবেন। ভারত আমাদের কাছের প্রতিবেশি। তাহলে বাংলাদেশিরা যাবে না কেন?
মেসবাহ কামাল বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমার মতে এই সীমাবদ্ধতাগুলো আমরা ধারণ করেছি ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই। এই সীমাবদ্ধতাগুলো উত্তর উপনিবেশিক কালে উপেক্ষিত ছিল। ব্রিটিশদের বিভাজনের রাজনীতির কারণে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ।
নয়া দিল্লির জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. এসডি মুনি সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততা বেশি। বিগত ১০ বছরে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শুনিনি। যখন আমি আমন্ত্রণপত্র পেলাম, আমার আরও কিছু প্রাধান্য দেওয়ার মতো কাজ ছিল। আমি ভাবছিলাম যাবো কিনা। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে একটি ‘কম্পোজিট কালচার’ ধারণ করে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ সেলিম ভুঁইয়া। সমাপনী বক্তব্য শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আন্তর্জাতিক এই কনফারেন্সের সমন্বয়ক এবং ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও শিক্ষকের প্রায় ৬৪টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথম দিনে প্ল্যানারি সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভারতের নতুন দিল্লির জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজের অধ্যাপক ড. সুচিত্রা মাহাজন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আফসান চৌধুরী এবং জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে ভারদোয়াজ। শনিবার দ্বিতীয় দিনে সকাল ১০টা থেকে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। এতে একটি প্ল্যানারি সেশন, টেকনিক্যাল সেশন ও সমাপনী অনুষ্ঠান কার্যক্রম ছিল।