‘হত্যা-ধর্ষণের তুলনায় বিচার পাওয়ার হার খুবই কম’





২২২২গত বছর দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন হয়েছে ১ হাজার ৪৪১টি। এর মধ্যে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনাই সবচেয়ে বেশি এবং এর ৫০ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে ঢাকা বিভাগে।
গত বছরে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘আমরাই পারি জোট’ বলেছে, ২০১৮ সালে প্রকাশিত তথ্যমতে, নারী ও শিশু হত্যার বিচার হয়েছে মাত্র ৪১টি এবং ধর্ষণের বিচার হয়েছে ১৮টি। সংঘটিত হত্যা ও ধর্ষণের তুলনায় বিচারপ্রাপ্তির এ হার খুবই উদ্বেগজনক।
শনিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’ আয়োজিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা: সহায়তা প্রাপ্তির সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভাটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা (জিএসি) ও অক্সফ্যামের সহায়তায় ‘ক্রিয়েটিং স্পেস টু টেক অ্যাকশন অন ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন অ্যান্ড গার্লস’ প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত হয়।
মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা নারীবান্ধব নয়। সমাজসেবা অধিদফতর সারাদেশে শেল্টার হোমের (আশ্রয় কেন্দ্র) ব্যবস্থা করছে এবং নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু যাতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পায় সেদিকে দৃষ্টিপাত করছে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ২টি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র আছে, নির্মাণাধীন আছে ১টি এবং ১৬টি প্রস্তাবিত। সরকার নির্যাতিতদের সহায়তায় ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণ চালু করেছে।’ এসময় তিনি সমাজসেবা মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বলেন, ‘পুলিশ, আইনজীবী, বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠানই নারী নির্যাতনের ইস্যুগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে না। নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে না।’ এসময় তিনি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পরিচালনার দাবি জানান।
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন ২০১৮ সালে দায়ের করা পিংকি আক্তার হত্যাকাণ্ড মামলার বাদী পিংকির মা। তিনি জানান, তার মেয়ের মৃত্যুর পর প্রথমে পুলিশ আত্মহত্যার অজুহাত দেখিয়ে মামলা নিতে চায়নি। পোস্টমর্টেম রিপোর্টটিকে তার পক্ষপাতমূলক মনে হচ্ছে। আর জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের হুমকি দিচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ‘আমরাই পারি জোটে’র জাতীয় কমিটির কো-চেয়ারপার্সন ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, নির্যাতন রোধে বিচারব্যবস্থা শক্তিশালী ও নারীবান্ধব করতে হবে। বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, পুলিশের অসহযোগিতা, অপর্যাপ্ত সরকারি সহযোগিতা ইত্যাদি কারণে নারী নির্যাতনের হার বেড়েই চলছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাবের কারণে পুলিশ আলামত নষ্ট করে, ডাক্তার ভুল ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেন, জনপ্রতিনিধিরা অনেক সময় নির্যাতিতদের ভয়ভীতি দেখান। এসময় তিনি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানকে সমর্থনের পাশাপাশি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান দাবি করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ‘আমরাই পারি জোটে’র নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. আলমগীর হোসাইন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, অক্সফ্যাম জিবি’র জেন্ডার ম্যানেজার নাজমুন নাহারসহ বাংলাদেশ নারী সংগঠনের নেত্রীরা, সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বিভিন্ন জেলা থেকে আগত আইনজীবী, সাংবাদিক, প্রতিবন্ধী সংগঠনের প্রতিনিধি, আমরাই পারি চেঞ্জমেকাররাসহ মানবাধিকারকর্মীরা।