দূর থেকে ভবনটি দেখলে মনে হবে একটি মার্কেট। কিন্তু সামনে গেলেই চোখে পড়বে থানার বড় সাইবোর্ড– ‘দক্ষিণখান থানা’। ভবনের ডানপাশে সড়কেই রয়েছে থানার ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড। থানার সামনেই পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও ভবনের প্রবেশপথটুকু বাকি রেখে দুইপাশে পার্কিং অবস্থায় সারি সারি মোটরসাইকেল চোখে পড়ে।
দক্ষিণখান থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভাড়া করা ভবনে দক্ষিণখান থানার কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। এই থানার নিজস্ব কোনও পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এর জন্য বাধ্য হয়ে থানার গাড়িগুলো সড়কের পাশেই রাখতে হয়। এছাড়া, কোনও মামলায় যদি গাড়ি জব্দ করা হয় তবে সেটিও এনে থানার সামনেই রাখতে হয়। এতে এলাকার এই রাস্তায় মাঝেমধ্যে যানজট লেগে যায়।
এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের থানার নিজস্ব পার্কিং নেই। এর জন্য রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করতে হয়। এতে কিছুটা সমস্যা হয়। তবে দক্ষিণখান থানার নিজস্ব ভবনের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জমির সয়েল টেস্টও সম্পন্ন হয়েছে। নতুন থানায় সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।’
গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে দক্ষিণখান থানায় সরেজমিন দেখা গেছে, ডিউটি অফিসার বসার কাউন্টারের গ্লাসে লাল কালিতে লেখা, ‘জিডি/মামলা করতে কোনও টাকা লাগে না।’ থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, অনেক মানুষ অনেক অভিযোগ নিয়ে আসেন, তবে ঘটনা জটিল হলে তদন্তসাপেক্ষে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা (৫ সেপ্টেম্বর) থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ১৬টি জিডি ও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে হারানো সংক্রান্ত জিডি রয়েছে।’ এ সময় হাতকড়া পরা এক আসামিকে থানার ওসির কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, তিনি একটি হত্যা মামলার আসামি। দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে।
৫ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ১১ মিনিট। রাজধানীর দক্ষিণখান থানার বড় কর্তার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক দম্পতি। দুজনের কোলে দুটি শিশু। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বড় কর্তার কক্ষে বসে ছিলেন তারা। দম্পতির পুরুষ সদস্য মোহাম্মদ মোমিন বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা আছে আমার। বিকাল ৫টার দিকে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। সেজন্য পুলিশ আমার অটোরিকশা ও চালককে থানায় নিয়ে এসেছে। এ কারণে ওসি স্যারের কাছে এসেছি। এখন কী হয় কে জানে?’ কিছুটা সংশয় তার কণ্ঠে।
উত্তরখানের দোবাদিয়া এলাকায় সবুর ব্যাপারীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন মোহাম্মদ মোমিন। অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। পরিবারে তার স্ত্রী, মেয়ে সিদরাতুল মিমতাহা (১৪) ও ছেলে মোহাম্মদ আলী (৪) রয়েছে। দুটি শিশুই শারীরিক প্রতিবন্ধী।
এরইমধ্যে মোমিনকে তলব করেন থানার ওসি। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর মুঠোফোনে মোমিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওসি স্যারের রুমে গিয়ে আমি আমার সব পরিস্থিতি খুলে বলি। এরপর ওই চালক ইব্রাহিমকে কষে দুই-তিনটা লাঠির বাড়ি দেওয়া হয়। পরে স্যারকে বলে ওই মোটরসাইকেল মালিককে সর্বসাকুল্যে ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিই। পরে উভয়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওসি স্যার বিষয়টি মিটমাট করে দেন।’
দক্ষিণখান থানা পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল গণি সাবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের থানায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য আছে। দক্ষিণখান থানা এলাকায় মোট ১৩টি বিট রয়েছে। প্রতিটি বিটের দায়িত্বে থানার একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রয়েছেন। এই থানার আওতাধীন পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। সাধারণ মানুষদের সঠিকভাবে পুলিশি সেবা দিতে আমরা সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’