গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আহত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্রিটিক্যাল অবস্থায় ছিলেন আব্দুল আহাদ। ঘটনার পর তার মৃত্যুর খবরও ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও ওই সময় তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। একাধিক গণমাধ্যম প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তার মৃত্যুর খবরও প্রকাশ করেছিল।
ঘটনার এক বছরের মাথায় শুক্রবার (৩০ জুন) দুপুরে এডিসি আব্দুল আহাদ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জঙ্গিরা হলি আর্টিজানে ঢুকে পড়ার ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। কয়েকজন জিম্মিকে উদ্ধারও করেছিলাম। জিম্মি উদ্ধারের কৌশল নিয়ে পুলিশ কমিশনার তখন ব্রিফিং করছিলেন। ঠিক তখনই আমাদের সামনে ও পেছনে একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ে মারতে থাকে জঙ্গিরা।’
আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমার পাশেই ছিলেন ওসি সালাহউদ্দিন ও এসি রবিউল ইসলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। দেখতে দেখতেই তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল তাদের শরীর। আমি তখনও দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার পা রক্তাক্ত। এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কিছু মনে নেই।’ ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার কারণে জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই সময় আহত পুলিশ কর্মকর্তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১০ স্প্লিন্টারের সন্ধান পান। নার্ভ ইনজুরি ধরা পড়ে। এছাড়া বাম পায়ে চারটি, ডান পায়ে চারটি ও ডান হাতে ২টি স্প্লিন্টারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। স্প্লিন্টারগুলো ক্রিটিক্যাল অবস্থানে ছিল। শরীরের ভেতর অনবরত মুভ করছে। ফলে ওইসময় অস্ত্রোপচার করে বের করা সম্ভব হয়নি। তার ডান পায়ের গোড়ালির নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়।
চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন, গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো এক বছর পর্যন্ত মুভমেন্টে থাকে। একবছর না গেলে এটা ফিক্সড হয় না। এ কারণে তিনি চূড়ান্ত অস্ত্রোপাচারের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। শিগগিরই সিঙ্গাপুরে যাবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হন। আহত হয়েছিলেন আরও অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় পাঁচ জঙ্গি ও হলি আর্টিজানের এক কর্মচারী সাইফুল ইসলাম চৌকিদার মারা যান। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে হলি আর্টিজানের আরেক কর্মচারী জাকির হোসেন শাওন মারা যান।
আরও পড়ুন-
অবিন্তা নেই, বেঁচে আছে তার স্বপ্ন
তুমি কোথায়, গুলশানে জঙ্গি হামলা!
দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন তারা
এসি রবিউলের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
/জেইউ/এমএনএইচ/