বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দল বেঁধে নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় দুই বছরেও সাত লাঞ্ছনাকারীকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত আটজনের মধ্যে মো. কামাল নামের একজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকিরা এখনও রয়েছে পুলিশের নাগালের বাইরে। এ ঘটনায় অভিযোগপত্র গ্রহণ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২ মে দিন ধার্য করেছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
এরপর, ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর যৌন নিপীড়নের মামলার আসামি খুঁজে না পাওয়ায় দ্রুত নিষ্পত্তির আবেদন জানিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার ডিবি পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
এদিকে, ডিবির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি মো. কামাল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ডিবি। একই সঙ্গে ডিবি মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে আদালতে আবেদন করে। এরপর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে পিবিআই তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ২০ ডিসেম্বর গ্রেফতারকৃত মো. কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।
মামলার তদন্তে কোনও ভুক্তভোগীর বক্তব্য না পাওয়ায় শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্ত চালাতে হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাদের শুধু ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্ত চালাতে হয়েছে। একজন ভিকটিমকেও পাওয়া যায়নি। ফুটেজ দেখে এটা নিশ্চিত যে অনেকে সেখানে অ্যাসল্ট হয়েছেন। কিন্তু লোকলজ্জা বা সামাজিকতার ভয়ে কেউ পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে আসেনি। সেটা পাওয়া গেলে তদন্তের কাজটা আমাদের জন্য আরও সহজ হতো।’
ভিকটিম না পাওয়া গেলেও প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়নের লিটন নন্দীসহ অন্যদের বক্তব্য আমরা শুনেছি। একাধিকবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাই ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি কামাল ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন।’
অভিযোগপত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে একজন গ্রেফতার থাকায় শুধু তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭ জনকে পাওয়া গেলে পরবর্তীতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হবে।’
বাকি সাতজনকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পিবিআই-এর কর্মকর্তা বলেন, ‘লাখ-লাখ মানুষের মাঝে এই সাতজনকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমরা তাদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছি। এছাড়া সোর্সদের কাছে প্রকাশিত ছবিগুলো পাঠানো হয়েছে। মিডিয়ার মাধ্যমেরও সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
মামলাটি বর্তমানে কি অবস্থায় আছে এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আদালতে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন বাকি কাজ আদালত করবে।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. কামালের আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কামাল এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। সে স্বীকারোক্তিও দেয়নি। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চার্জ গঠন হয়নি। আগামী শুনানিতে ডিসচার্জের আবেদন করবো। সে অনুযায়ী মামলার পরবর্তী কাজ পরিচালনা করা হবে।’
তবে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে এ ধরনের যৌন হয়রানির মতো ঘটনা প্রতিরোধে এবার পহেলা বৈশাখে বিশেষ টিম নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ঠেকাতে বিশেষ টিম কাজ করবে।’
/এমও/