পশ্চিমবঙ্গে আইএস- জেএমবি সেতুবন্ধনের প্রয়াস !

পশ্চিমবঙ্গে আইএস-জেএমবি সেতুবন্ধনের প্রয়াসজামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)- এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতে ইসলামিক স্টেট (আইএস)- কে বিস্ফোরক ও বোমা সরবরাহের পরিকল্পনা করেছিলেন হুগলির ধনেখালির বাসিন্দা, কলেজ ছাত্র আশিক আহমেদ। আর এ ব্যাপারে তিনি মুর্শিদাবাদে জেএমবির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করেছিলেন। আশিককে জেরা করে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র একটি সূত্রে জানা গেছে।

জেএমবির কাদের সঙ্গে আশিকের কতটা যোগাযোগ হয়েছিল এবং বিস্ফোরক ও আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) সরবরাহের ব্যাপারে তারা কতদূর এগিয়েছিলেন, সেটাই এখন জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

গত ১৭ মার্চ আশিককে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। বর্ধমান জেলার কাঁকসার একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র আশিকের বিরুদ্ধে ভারতে আইএসের শাখা, জুনুদ-অল-খলিফা-এ-হিন্দ (ভারতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার যোদ্ধারা)-এর সদস্যদের মদত ও সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে গ্রেফতার করার অনেক আগেই আশিককে ২৩ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাদের একটা অংশ দাবি করছিলেন, আশিক তদন্তে পুরোপুরি সহযোগিতা করছেন এবং ১৯ বছরের এক ছাত্রের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু ‘বাংলা ট্রিবিউন’-ই তখন ইঙ্গিত দিয়েছিল, যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে আশিককে গ্রেফতার করা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বনি ইজরাইল নামে মুর্শিদাবাদের এক যুবক পেশায় রাজমিস্ত্রি জানিয়েছিলেন, বোমা বানানোয় প্রশিক্ষিত জেএমবির এমন কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি আইএসের ভারতীয় শাখাকে আইইডি জোগান দেবেন। বনিকে এখনও জেরা করা হয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

এনআইএ জানাচ্ছে, ভারতে আইএস-এর শাখা, জুনুদ-অল-খলিফা-এ-হিন্দ-এর অর্থনৈতিক প্রধান, কর্নাটকের মহম্মদ নাফিস খান জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গে এসে আশিকের সঙ্গে দেখা করেন। বর্ধমানের কাঁকসায় আশিক যে মেস-এ থাকতেন, সেখানে এসে তিনি একরাত কাটিয়েও যান। আবার আশিক-ই তার ফেরার জন্য ট্রেনের টিকিট কেটে দেন। হুগলির তারকেশ্বরে একটি মসজিদের কাছে আশিক, নাফিস, বনি ইজরাইল এবং হুগলির দুই যুবকের বৈঠক হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, বানি ইজরাইল সেখানেই নাফিস খানকে জানান, নাশকতা ঘটানোর জন্য বোমা বানাতে পারেন, মুর্শিদাবাদে এমন কয়েকজন প্রশিক্ষিত লোকজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে এবং তাই বোমা পেতে কোনও অসুবিধা হবে না। এই আশ্বাস পেয়ে তখনকার মতো নাফিস পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যান এবং বলে যান, সব কিছু জোগাড় করে তাকে যেন জানানো হয়। তবে তার আগেই, ২২ জানুয়ারি নাফিস ও আইএসের ভারতীয় শাখার আরও ২১ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে এনআইএ।

আইএসের এই বিষয়টির তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-ই কিন্তু বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ২০১৪-র অক্টোবরে জেএমবির অস্ত্র তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের মামলাটি তদন্ত করছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য, খাগড়াগড়ের আগে এমন বোমা তৈরির কারখানা জেএমবি তৈরি করেছিল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বোরখা ঘরে। খাগড়াগড় ও বেলডাঙার ওই দু’টি আস্তানায় তৈরি বোমা ও দেশি গ্রেনেড যে বাংলাদেশে একাধিক নাশকতার ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে, তার প্রমাণও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাদের দাবি, বেলডাঙায় বিস্ফোরক সরবরাহ করা ও বোমা বানানোর কাজে যুক্ত, এমন বেশ কয়েকজন জেএমবির সদস্যকে এখনও ধরা যায়নি। বানি ইজরাইল সম্ভবত তাদের দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

এনআইএ-র এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি কেবল আল কায়দা থেকে অনুপ্রাণিত। খাগড়াগড় তদন্তে আরও এগিয়ে আমরা বুঝতে পারি, এরা আইএসের পথও অনুসরণ করছেন। মুর্শিদাবাদের কারিগরদের দিয়ে বোমা তৈরি করে আইএসের ভারতীয় শাখাকে সরবরাহের মতলব যে কারণে আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।’’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, এ বিষয়ে তারা এখনও অবহিত নন। তবে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

এপিএইচ/