বিচারকাজে বিড়ম্বনা, সময় ও খরচ কমানোই প্রধান লক্ষ্য: আইন উপদেষ্টা

আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে—বিচারকাজে বিড়ম্বনা, সময় ও ব্যয় কমানো। এ জন্য ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু সংস্কারকাজ করেছি। এটা হয়তো খুব বেশি বুঝা যাচ্ছে না। কিন্তু যারা আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের বুঝার কথা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা অফিসার মো. রেজাউল করিম জানান, সংশোধনের কিছু উদাহরণ দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, দেওয়ানি কার্যবিধির  যুগান্তকারী বেশ কিছু সংশোধন করা হয়েছে—যা উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। আশা করছি উপদেষ্টা পরিষদের আগামী সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করবে।

ফৌজদারি কার্যবিধিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, যদি বিচার করার সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায় এবং ৪০ শতাংশ মামলা জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রধান সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়, তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য অনেক বড় একটা কাজ করা হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মামলা দায়ের হয়। আর জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় ৩৫ হাজার মামলা। সংস্থাটিতে বছরে দুই  লাখ মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হলে আদালতে মামলার চাপ কমপক্ষে ৪০ শতাংশ হ্রাস পাবে।

পারিবারিক মামলা, এনআই অ্যাক্টের মামলা, আপসযোগ্য ফৌজদারি মামলাসহ ছোট ছোট মামলাগুলো বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় পাঠানো সম্ভব হলে আদালতগুলোতে বিপুল সংখ্যক মামলাজট কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে মাত্র একজন করে সহকারী/ সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারক কাজ করছেন। কাজের গতি বাড়াতে এসব অফিসে একজন সিনিয়র সহকারী জজ ছাড়াও একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং  একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দেওয়া হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে আমরা এমন একটা পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই, যেখানে অন্তত এক লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে এবং আগামী এক বছরের মধ্যে সেখানে দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে। এটা করা সম্ভব হলে, বাংলাদেশে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য অনেক বড় সুবিধা তৈরি  করবে।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সেরা প্যানেল আইনজীবীর হাতে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন আইন উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রধান সংস্থার পরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী।

এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে লিগ্যাল এইড রোড শো ও লিগ্যাল এইড মেলা উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।