দুই দেশের অগ্রাধিকারের মাঝে মিল খুঁজে বের করবে ঢাকা-ওয়াশিংটন

বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের মাঝে মিল খুঁজে বের করতে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা ও ওয়াশিংটন বৈঠকে বসবে। আঞ্চলিক পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুপক্ষ সামনের দিনগুলোতে কীভাবে কাজ করতে চায়, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এন চুলিক এবং পূর্ব ও প্যাসিফিক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এন্ড্রু হেরাপ ঢাকা পৌঁছেছেন। তাদের সহায়তা করার জন্য মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতও ঢাকা এসেছেন।

সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও হাইরিপ্রেজেন্টিটিভ খলিলুর রহমান এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন কর্মকর্তা ছাড়াও অন্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকী ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এন চুলিকের সঙ্গে বৈঠকের পর এক ফেসবুক পোস্টে জানান যে আগামী সপ্তাহে মার্কিন দফতরগুলোর সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি ওয়াশিংটন যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে বিকশিত হতে পারে এবং এগিয়ে যেতে পারে, সেটি নিয়ে দুপক্ষের আগ্রহ আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলা হবে।’

মার্কিন পক্ষের দিক থেকে আগ্রহের জায়গা কোনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’

রফতানি বৃদ্ধি, চীনবিরোধী নীতি, কঠিন অভিবাসন নীতি, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। বাংলাদেশ এসব বিষয়ে কীভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজ করতে পারে, সেটি আলোচনার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে বলে তিনি জানান।

রোহিঙ্গা সহযোগিতা

গত ২৭ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন—‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনভাবে বৈদেশিক সাহায্য প্রদান করবে, যা কৌশলগতভাবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার এবং আমাদের স্বাগতিক দেশগুলোর অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ’

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টির পর মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর ওই সহায়তার বিষয়ে প্রথমে অনীহা প্রকাশ করলেও পরে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার সহায়তা দিতে রাজি হয় যুক্তরাষ্ট্র।

এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন প্রশাসনের রোহিঙ্গা নীতি এবং মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মার্কিন আর্থিক সহায়তার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের মানবিক বিষয়গুলো বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’

শুল্ক আরোপ

এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। তবে প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৯০ দিনের জন্য সেটি স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশি উৎপাদনকারীদের পাশাপাশি মার্কিন ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দুপক্ষকে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে—এটি কীভাবে সমাধান করা যায়।’

মার্কিন ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে কীভাবে বাংলাদেশ অর্থ সহযোগিতা পেতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী বাংলাদেশ বলে তিনি জানান।