প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, আরাকানে যাতে দ্রুত শান্তি এবং স্থিতি ফিরে আসে, সেখানে অত্যন্ত মানবিক একটা পরিস্থিতি যাচ্ছে, সেটা নিরসনে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছি। সেজন্য দরকার বিবাদমান দুই পক্ষের যুদ্ধের বিরতি। সেই সময় থেকে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটা বাস্তব আলোচনা করতে পারবো।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার বিমসটেক সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, আলোচনায় আমাদের ধারণা হয়েছে যে, জাতিসংঘ যখন মানবিক সহায়তা দেবে, সে সময় যুদ্ধাবস্থা দুই পক্ষই পরিহার করবে। তার থেকে একটা স্থিতির সূচনা হবে বলে আমরা আশা করছি। সেই মুহূর্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি, এটির খুব বেশি দেরি নেই।
তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ছয় কিস্তিতে মিয়ানমারের কাছে ৮ লাখ রোহিঙ্গার যে তালিকা দিয়েছিলাম, সেই তালিকা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য পর্যালোচনা করেছে। তার মধ্যে তারা এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে আইডেন্টিফাই করেছেন, যারা মিয়ানমার থেকে এসেছেন। আর বাকি ৭০ হাজার রোহিঙ্গার ছবি ও নাম নিয়ে কিছুটা কনফিউশন আছে, সেটা দূর করার জন্য আমরা দুই পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাবো। একইসঙ্গে তারা আমাদের বলেছেন— বাকি ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য পর্যালোচনা অতি দ্রুত সম্পন্ন করবেন।
তিনি বলেন, এই ১ লাখ ৮০ হাজার যাদের ঠিক করা হয়েছে, তারা কিন্তু কালকেই চলে যাচ্ছেন না। প্রত্যেক প্রত্যাবাসনের একটা প্রক্রিয়া আছে। তারা যাবে, কীভাবে যাবে। যেখানে যাবে সেখানের অবস্থা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয় আছে, যেখানে যাবেন সেখানে জীবন-জীবিকার সংস্থান আছে কিনা। শুধু রোহিঙ্গা নয় , যেকোনও প্রত্যাবাসনে এই বিষয়গুলোকে মনে রাখতে হবে। এগুলো নিরসন করতে হবে। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কারা প্রত্যাবাসিত হবেন, তার জন্য যেমন মিয়ানমারের কাছ থেকে ভেরিফিকেশন নিতে হচ্ছে, এই প্রক্রিয়া ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে যে চুক্তি হয়, সেই অনুযায়ী হয়েছে।
হাই রিপ্রেজেন্টেটেটিভ বলেন, সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, রাখাইন কিন্তু এখনও মিয়ানমারের সার্বভৌম অঞ্চল। ফিরিয়ে নেওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি আরাকান আর্মির সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের একটি মৌলিক অবস্থান। তারা এটা প্রকাশ্যে সেপ্টেম্বরে বলেছে, আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময়, তারা এটা পুনর্ব্যক্ত করেছে দ্ব্যর্থহীনভাবে। সে কারণেই আমরা মনে করি, এই ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাদের আমরা ফিরিয়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত করতে পারবো। তবে সময় লাগবে, এটা তো কালকেই হচ্ছে না। যাতে তারা দ্রুত সময় যেতে পারেন, আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে, সেজন্য আমরা মিয়ানমারে বাস্তবে যারা কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র যারা আছে, তাদের সবার সঙ্গে মিলে আমরা এই কাজটি করবো। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, আগামী ঈদ তারা মিয়ানমারে গিয়ে করবেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ৮ বছরে আমরা প্রত্যাবাসনের জন্য একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা পেলাম। এখন কথা হচ্ছে, একটা জনগোষ্ঠীকে তো আপনি আগুনের মধ্যে ঠেলে দিতে পারেন না। তার নিরাপত্তা দেখতে হবে, সেখানে গিয়ে যাতে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সেটা দেখতে হবে। এই কাজ আমরা একা পারবো না।