মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, হাওরের মাছ প্রকৃতির দান। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে মাছের প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট সময় না দিয়ে মানুষ ভোক্তা ও আহরণকারী হিসেবে অত্যন্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সিলেট নগরীর সুবিদবাজারের খাঁনস প্যালেস কনভেনশন হলে ‘হাওরে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় স্টেকহোল্ডারস কনসাল্টেশন ওয়ার্কশপ’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘হাওরে মাছের গতিপথে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে ও রাস্তা নির্মাণ করে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরে দেশীয় প্রজাতিগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে।’
মৎস্যসম্পদ রক্ষায় যারা মাছ ধরছেন তাদের ভূমিকা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন মৎস্যজীবীর আগে প্রকৃত মৎস্যজীবী, অরিজিনাল মৎস্যজীবী, এরকম যে ভাষা চলে আসছে- এটার মানে হচ্ছে এ পেশায় যারা নিয়োজিত তাদের প্রতি অনেক অন্যায় করা হয়েছে। যারা সত্যিকারের মৎস্যজীবী তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। অতি মুনাফাকারীরা ব্যবসার নামে মাছের ক্ষতি করেছে। এজন্য প্রকৃত মৎস্যজীবীদের স্বার্থ সংরক্ষণে দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ করা অত্যন্ত দরকার। মাছ ধরা পেশাকে আধুনিকায়ন করতে হবে, যাতে তারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারেন।’
প্রজননকালীন সময়ে মাছ ধরতে নিষিদ্ধের বিষয়ে হাওর অঞ্চলে বিলবোর্ড ও রেডিও-টেলিভিশনে এ সংক্রান্ত প্রচারণা করা যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে মাছ ধরা নিষিদ্ধের পাশাপাশি পর্যটনও এ সময় নিষিদ্ধ করতে হবে।’
এ সময় বক্তারা বলেন, হাওরে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় হাওর ম্যনেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান করে মা মাছ রক্ষা এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। তারা হাওরে সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ইজারাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে মৎস্যজীবীদের দিয়ে হাওর ব্যবস্থাপনা এবং মৎস্যজীবীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।
উন্মুক্ত আলোচনায় সিলেট বিভাগের সাত জেলার মৎস্যজীবী প্রতিনিধিরা বলেছেন, মাছের প্রজনন সমস্যা হচ্ছে। অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। আরও প্রজাতি বিলুপ্তের পথে। ফসল রক্ষায় বাঁধের কারণে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। অধিক কীটনাশক ব্যবহার, হাওরের ইজারা প্রথা, সেচ দিয়ে মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কারণে হাওরের মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মাছ ডিম কম দিচ্ছে ও সব ডিম থেকে বাচ্চাও ফুটছে না। বিভিন্ন জাল দিয়ে মৎস্য শিকার করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বিলগুলো খনন, জাল নিষিদ্ধ, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরক্ত কীটনাশক ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। তারা আষাঢ়-জৈষ্ঠ্য মাসে মা মাছ ধরা নিষেধের ওপর গুরুত্বারোপ করে নিষিদ্ধকালীন মৎস্যজীবীদের সরকারি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
মৎস্য অধিদফতর সিলেট বিভাগ আয়োজিত-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, সিলেট বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবীরা।
উল্লেখ্য, দেশের উত্তর-পূর্বাংশে ৭টি জেলার ৪৭টি উপজেলা নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৯৫, সিলেটে ১০৫, হবিগঞ্জে ১৪, মৌলভীবাজারে ৩, নেত্রকোণায় ৫২, কিশোরগঞ্জে ৯৭ এবং ব্রাম্মণবাড়িয়ায় ৭টি মিলে মোট ৩৭৩টি হাওর রয়েছে।