‘আমরা নদীর সঙ্গে লড়াই করতে পারি না, তবে পরিচালনা করতে পারি’

আমরা নদীর সঙ্গে লড়াই করতে পারি না, তবে আমরা আমাদের নদীগুলো পরিচালনা করতে পারি। এখানে পানি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা প্রণয়নে স্থানীয় জ্ঞান ও সম্প্রদায়ের মানুষকে একীভূত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস হেগে ‘পানি ও বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ' শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। নেদারল্যান্ডসে কর্মরত বাংলাদেশি পানি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত, ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পানি বিশেষজ্ঞরা এ আলোচনায় অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়ে বলেন, বন্যার ক্রমবর্ধমান মাত্রা ও তীব্রতা ব্যাপক স্থানচ্যুতি, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জে হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমাগত তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা ব্যবস্থাপনা ও পানি ব্যবস্থাপনা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান এবং পানি ব্যবস্থাপনাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নের বাহন হিসেবে পরিণত করার জন্য উদ্ভাবনী ও সহযোগিতামূলক পন্থা প্রয়োজন।

আইএইচই ডেলফ্টের পানি প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস জেভেনবারগেন বলেন, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত গতিশীল ব-দ্বীপ। এর জন্য গতিশীল পরিকল্পনাও প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনার অধিকাংশ বড় প্রকল্প ভালোভাবে কাজ করছে না। আমাদের সময়ে সময়ে নতুন সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশে এমন অনেক পানি বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরিতে অবদান রাখতে পারেন।

পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. রুকনুল ফেরদৌস গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, বন্যার ঝুঁকি কমাতে বন্যার পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বন্যা মৌসুমে প্রতিদিনের পূর্বাভাস সরবরাহ করে। কিন্তু বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে এই তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি রয়েছে। বর্ধিত প্রচারকৌশল, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ এবং ঝুঁকি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট যোগাযোগের মাধ্যমে বন্যার পূর্বাভাসকে আরও কার্যকর করতে হবে।

ডেল্ফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পিএইচডি প্রার্থী কিফায়াথ চৌধুরী জোর দিয়ে বলেন, প্রশমনের জন্য সরকারি সংস্থা, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং সম্প্রদায়ের নেতাদের সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতা প্রয়োজন। অংশীদারদের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় আরও ভালো বন্যা সুরক্ষা ব্যবস্থার নকশা এবং বাস্তবায়নের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

টিইউ ডেলফ্টের পিএইচডি প্রার্থী মোহাম্মদ সাইদি হাসান বলেন, আমরা বন্যার ঝুঁকিগুলোকে অর্থনৈতিক সুযোগে পরিণত করতে পারি। বন্যাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসাত্মক হিসেবে দেখার পরিবর্তে, টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো স্থানীয় অর্থনীতিকে উন্নত করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে।

তিনি কৃষি, পর্যটন এবং মাছচাষের মতো ক্ষেত্রগুলোকে সমর্থন করার পাশাপাশি পানি ধরে রাখা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের উন্নতির জন্য জলাভূমি এবং সবুজ জায়গার মতো প্রাকৃতিক পরিকাঠামো ব্যবহারের ওপর জোর দেন।

ওয়াগেনজেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চের গবেষক মো. ফিরোজ ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক মুহম্মদ উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস পানি ব্যবস্থাপনার সহযোগিতায় বিশ্বস্ত অংশীদার। তিনি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং তার পরেও দ্বিতীয় পর্যায়ে এই অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার আশা করেন।