জুলাই-আগস্টে হতাহতদের জন্য অনুদান আহ্বান: সহায়তায় নেওয়া হচ্ছে যেসব উদ্যোগ

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, নিহত হয়েছেন প্রায় ৮০০ জন, আর আহতের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। এসব হতাহতের পরিবারকে সহায়তা এবং অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ ফাউন্ডেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ অর্থ দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে নিহত ও আহতদের পরিবারকে জরুরি আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করবে। এককালীন ও মাসিক ভাতা হিসেবে এই সহায়তা দেওয়া হবে। এর বাইরেও রয়েছে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ। তাই এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তহবিলে অনুদান দেওয়ার জন্য দেশবাসীর আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দফতর সম্পাদক নাহিদ ইসলাম।

হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। সেখানে ২০ হাজারের বেশি আহত। সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না, প্রয়োজনে আমি সাংবাদিকদের কাছে তালিকা পাঠিয়ে দেব। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুসারে। শহীদের সংখ্যা প্রায় ৮০০। এখন তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রায় ৭০০ শহীদ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। আর যোগাযোগ সম্পূর্ণ হলে স্মরণসভা হবে।

এককালীন ক্যাশ ও মাসিক ভাতা

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে নাহিদ ইসলাম বলেন, আহত ও নিহতদের পরিবারকে জরুরিভাবে আর্থিক সহায়তা করা হবে। পরবর্তীতে এককালীন ক্যাশ টাকা এবং মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের আর্কাইভিং করা, অভ্যূত্থানের স্মৃতি ধরে রাখা, তাদের আদর্শকে বাস্তবায়ন করা এবং শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখা। দীর্ঘমেয়াদী তাদের পরিবার ও আহতদের সহায়তা করা। আহত ও নিহতদের পরিবার ট্রমার মধ্যে আছে। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কাউন্সিলিং করা হবে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক প্রচারণা করা হবে।

এ সপ্তাহ থেকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রথম উদ্যোগ জরুরি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান নাহিদ ইসলাম।  তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পক্ষ থেকে  প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে ১০০ কোটি টাকার ফান্ড জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এটি স্বাধীন ফাউন্ডেশন। এখানে যে কেউ সহযোগিতা করতে পারবে। আমরা দেশ ও দেশের বাইরের সবার কাছে এ ফাউন্ডেশনে অনুদান দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে আমাদের সব উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি। শহীদ পরিবারদের পাশে দাঁড়াতে পারি।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে বন্যা তহবিলে যে অনুদান আসছে, সেটা দিয়ে বন্যার্তদের পুর্নবাসনে যে উদ্যোগ নিচ্ছি সেটার সঙ্গে এটা আলাদা। এর বাইরে প্রধান উপদেষ্টা চাইলে যেকোনও খাতে অনুদান দিতে পারেন। ফাউন্ডেশনের তহবিল সরকার থেকে নিয়ে শুরু করলাম। এখন দেশের সব নাগরিকদের কাছে অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকেও যেসব উদ্যোগ তা আলাদাভাবে চলতে থাকবে এবং ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমও চলতে থাকবে।

তিনি বলেন, ফাউন্ডেশনের যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকভাবে সবার কাছে অনুদানের আহ্বান জানাচ্ছি।

ক্ষতির মাত্রা অনুযায়ী আহতদের তালিকা 

আহতদের চিকিৎসার উদ্যোগ যথাযথ মনে করেন কিনা— এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্তের মাত্রা অনুযায়ী আহতদের তালিকা করা হয়েছে। যারা চোখ হারিয়েছে তাদের জন্য একটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম বাইরে থেকে আনার চেষ্টা করছি। যাতে দৃষ্টি শক্তি যতটা সম্ভব ফেরাতে পারি। আহতদের চিকিৎসায় সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যালে ফ্রি করা হয়েছে। অনেকের পারিবারিক আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে, তাদের সহায়তা দরকার হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও সহায়তা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় অনেকেই রিচ করতে পারি নাই, সেসব ক্ষেত্রে আমরা মেডিক্যালগুলোকে বলে দিয়েছি ব্যক্তিগতভাবে যারা টাকা খরচ করেছে তা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা যাতে করা হয়। এ কাজগুলো যাতে দ্রুত আগায় তার জন্য সরকারের পাশাপাশি ফাউন্ডেশন সমান্তরালে কাজ করবে। এ সপ্তাহে প্রতিটি বিভাগে একযোগে জরুরি আর্থিক সুবিধা দেবো ক্ষতির মাত্রা অনুযায়ী। পরবর্তীতে নীতিমালা করে এককালীন ও মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করব।

আর্থিক অনুদান ও ভাতার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। আগামীকাল (বুধবার) এ ফাউন্ডেশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। সেটার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, কমিটির সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে অনুদান দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন,  আপনাদের দান আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যারা আহত অবস্থায় আছেন তাদের চিকিৎসা জরুরিভাবে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চিকিৎসা যত বিলম্ব হবে আহতদের ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে।