নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বড় ধরনের আলোচনা না করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব শফিউল আলম। নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকাটা সমীচীন হবে মন্তব্য করে ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিনে এই টেকনিক্যাল কাজটিতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এখন মাঝপথে সরকারের অন্য একটি সংস্থার কাছে গেলে এই তথ্যভাণ্ডারের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটতে পারে। একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।’
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এনআইডি হস্তান্তরের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানোর কারণ ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, ‘এনআইডি সেবাটা ভোটার তালিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ছবিসহ ভোটার তালিকার উপজাতসহ এই এনআইডি। এনআইডির সম্পূর্ণ তথ্যভাণ্ডার ইসির কাছে রয়েছে। এটা খুবই স্পর্শকাতর এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশি সুরক্ষিত থাকবে বলে আমাদের কাছে মনে হয়। এনআইডি একটি কারিগরি কাজ। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের কর্মীরা এতদিন এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এ সময়ে হঠাৎ করে এনআইডি অন্য কোনও নির্বাহী বিভাগের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে ভোটার তালিকার বিশ্বস্ততা ও এনআইডি-সেবা নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়নি। আমি যেটা জেনেছি—এটা হস্তান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়ার সময়ে নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট আলোচনায় আনা হয়নি। এ বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছি। এ বিষয়ে এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এনআইডি ইসির অধীনে থাকা উচিত। ভবিষ্যতে এ সেবা আরও বিস্তৃতি হবে। হস্তান্তর হলে মানুষ আরও হয়রানির সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছি।’
সরকারের কাছ থেকে কোনও আশ্বাস পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যে কোয়ারিজগুলো… তার উত্তর দিচ্ছি। আমাদেরও প্রমাণ করতে হবে যে আমরা ভালো সেবা দিচ্ছি। এজন্য আমরা মাঠ প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে মনিটরিংয়ের আওতায় আনছি। আমরা মনে করি মানুষ বুঝুক নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে কোনও ধরনের ভ্রান্তি ছাড়া সঠিক ও সহজভাবে দিচ্ছে। আমরা ১০০ ভাগ নির্ভুল, দুর্নীতিমুক্ত দ্রুত সেবা দিতে চাই—এজন্য আমরা কাজ করছি। আগামীতে এটা দৃশ্যমান হবে।’
এনআইডি ইসির কাছে থাকবে এমনটা প্রত্যাশা করেন কিনা, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের যুক্তিগুলো বলেছি। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার জন্য আইন হয়েছে। কিন্তু এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখনও সুযোগ রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, যে ডাটাবেজ আছে, টেকনিক্যাল দক্ষ জনবল রয়েছে, সেটা রাতারাতি করতে (পরিবর্তন) গেলে, আবার একটা বিশৃঙ্খলা আসতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা—সাড়ে ১২ কোটি নাগরিকের সুরক্ষিত তথ্য রয়েছে। এখন মাঝপথে এসে এটা করতে গেলে এই তথ্যের সুরক্ষার কোনও ব্যত্যয় হবে কিনা, সেটাও বিবেচনা করার বিষয় রয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে আমরা এই এনআইডি সেবা দিচ্ছি।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সচিবদের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে ইসি সচিব বলেন, ‘‘ওইদিন প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ‘জনগণের সেবা সহজ ও দুর্নীতিমুক্ত করার। জনগণকে আস্থায় নিয়ে আসার।’ এই নির্দেশনার আলোকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এক মাসের একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমরা আগামী ৮ অক্টোবরের মধ্যে সেবা সহজ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সভার আয়োজন করছি। উপজেলা পর্যন্ত যেন দ্রুত এনআইডি সেবা পায় এবং প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মানুষের যাতে হয়রানি না হয়, সেজন্য কাজ করছি। আমরা মনিটরিং জোরদার করছি। জবাবদিহি নিশ্চিত করছি। কেউ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হলে, তদন্তসাপেক্ষে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। এনআইডির ক্ষেত্রে কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকলে তা তদন্ত করছি। এগুলোর ক্ষেত্রে আইনানুগভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেবাগ্রহীতাদের কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিলে তাদেরও চিহ্নিত করছি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো।’