গণত্রাণ কর্মসূচি:  চার দিনে সংগ্রহ সোয়া ৫ কোটি টাকা

দেশে চলমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং বন্যার্তদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ কার্যক্রমে চার দিনে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা জমা পড়েছে। শিক্ষার্থীদের আহ্বানে বন্যাদুর্গত মানুষদের সহায়তা করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পোশাক, পানি ও খাদ্যপর্ণসহ নানা প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী ও অর্থ দিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। 

গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) থেকে গণত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের ডাকে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ সাড়া দেন। রবিবার (২৫ আগস্ট) বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা জমা পড়ে।

রবিবার রাত ৮টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা এবং এর ফলে সৃষ্ট মানবিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ২২ আগস্ট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি বুথের মাধ্যমে নগদ টাকা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করা শুরু হয়। এই কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ার ফলে পর্যায়ক্রমে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া এবং সেন্ট্রাল ফিল্ড নিয়ে আমাদের কর্মসূচি চলমান।

অর্থ সংগ্রহের বিবরণ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, গত ২২ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট বিকাল ৫টা পর্যন্ত মোট ৫ কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার ৬০৩ টাকা অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৬৯০ টাকা, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে ৬২ লাখ ৯৪ হাজার ১২০ টাকা এবং ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে ২১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৩ টাকা।

সংগ্রহকৃত অর্থের মধ্যে গত চার দিনে ৩০ লাখ ১২ হাজার ৯৭০ টাকা বন্যার্তদের সহযোগিতায় ব্যয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জমা হওয়া ত্রাণ সামগ্রীএই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগৃহীত অর্থ-সামগ্রী নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বন্যাকবলিত জেলায়গুলোতে সশরীরে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি থেকে সংগৃহীত এবং ক্রয়কৃত সামগ্রী ব্যবহার করে একটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাদ্য এবং ওষুধের প্যাকেজ তৈরি করা হয়। এ রকম ৮০০ থেকে এক হাজারটি প্যাকেট এবং ২০ থেকে ৩০ কেস পানি দিয়ে একটি ট্রাক পরিপূর্ণ করা হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় ২২ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট বিকাল ৫টা পর্যন্ত যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে ৫০টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি প্যাকেট পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ৩ হাজার প্যাকেট হেলিকপ্টার যোগে বন্যাকবলিত দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বণ্টন করা হয়েছে এবং ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রেজওয়ান আহমেদ রেফাত বলেন, আমরা জনসাধারণের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় অনেক অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী আসছে। তবে চিড়ামুড়ি, গুড়সহ শুকনা খাবারের অনেক সংকট দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও শিশু খাদ্য ও পানি বিশুদ্ধ উপকরণের অনেক সংকট হচ্ছে। বাজারেও এগুলো তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। আর পর্যাপ্ত কাপড়চোপড় আছে। এগুলো আর লাগবে না।

তিনি আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা ৫০টি ট্রাকের মাধ্যমে ৫০ হাজারের বেশি প্যাকেট পাঠানো হয়েছে৷ এসব ত্রাণ সামগ্রী কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মিরসরাই, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় পাঠানো হয়েছে। আমরা সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রসাশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পাঠাতে নৌবাহিনী আমাদের সহায়তা করছে। তাদের হেলিকপ্টার দিয়ে আমাদের সাহায্য করছে।