ডেমু ট্রেনের সরবরাহকারীদের তলব করলো সংসদীয় কমিটি

ডেমু ট্রেনের দেশি ও বিদেশি সরবরাহকারীদের তলব করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটি আগামী বৈঠকে তাদের উপস্থিত করতে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

বুধবার (৩১ জুলাই)  সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ডেমু ট্রেন আমদানিতে সরকারের ৬৫৩ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে উল্লেখ করে এর সঙ্গে কারা জড়িত এবং এটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে কালো তালিকাভুক্ত করা যায় কিনা প্রতিবেদন দেওয়ার সুপারিশ করা হয় কমিটির আগের বৈঠকে। বুধবারের বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়- চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাংশান রেলওয়ে ভেহিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড থেকে ২০১৩ সালে ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ সেট (তিন ইউনিটে এক সেট) ডেমু সংগ্রহ করা হয়।

স্বল্প দূরত্বে কমিউটার ট্রেন পরিচালনার বিবেচনায় ডেমু ট্রেন কেনা হলেও পরে রুটের দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটারেরও বেশি নির্ধারিত হয়। কেনার পর গত ১১ বছরে ডেমুর কোন ধরণের ভারী শিডিউল/জেনারেল ওভারহলিং সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যমান ওয়ার্কশপগুলোতে ডেমুর শিডিউলের জনবল ও কারিগরি সুবিধাদি নেই। ফলে বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডেমু সেটগুলো প্রায়ই মেরামতাধীন হয়, দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ইঞ্জিনের লোড অনেক বেড়ে যায়, বেশ কিছু ডেমু দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৈদেশিক উৎস থেকে ডেমুর মালামাল সংগ্রহ করা অনেক ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

ডেমুগুলো সংগ্রহের পর ৫/৬ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে যাত্রীসেবা দিয়েছে উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমু ট্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রকল্প চলাকালীন বা ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে কোনও ধরণের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ডেমু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ নির্মাণের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। ডেমু ট্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে কালো তালিকাভুক্ত করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দরকার বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শেষে বুধবারের বৈঠকে ডেমু ট্রেনের দেশি ও বিদেশি সরবরাহকারীদের ডাকার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বৈঠকে রেলের অনলাইন টিকিট বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত ‘সহজ ডট কম’র সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় জরিমানা আদায় ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

প্রধান আইন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি ও চুক্তিভিত্তিক আইন কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করা হয়।

দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মের কারণে কমিটির সর্বসম্মতিতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) পার্থ সরকারকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, শফিকুল ইসলাম শিমুল, শামীম ওসমান, ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মো. শফিকুর রহমান ও মোছা. নুরুন নাহার বেগম বৈঠকে অংশ নেন।