কালো টাকার মালিক অভিজাতরাই বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সরকার দলীয় এমপি জাহিদ মালেক। সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কালো টাকার মালিক হচ্ছে অভিজাতরা (হোয়াইটকলার)। দেশের কোটি কোটি কৃষক কালো টাকার মালিক নয়, যারা শিল্প-কল-কারখানা তৈরি করে তারা কালো টাকা তৈরি করে না। প্রবাসীরা কালো টাকার মালিক না, অভিজাতরাই কালো টাকা তৈরি করে। কালো টাকার বিষয়ে নজর দিতে হেবে।’
শনিবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সরকার দলীয় এ এমপি।
তিনি বলেন, ‘কালো টাকার বিষয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। আমরা এটা চাই না। আমাদের যে টাকা বিদেশে চলে গেছে, তা আনা গেলে দেশের অর্থনীতি আরো ভালো হতো। অর্থনীতি কিছুটা হলেও চাঙা হতো। কালো টাকা কমাতে হলে দুর্নীতি কমাতে হবে, ট্যাক্স কমাতে হবে। তবেই কালো টাকা জন্ম নেবে না। কালো টাকা জন্ম না নিলে টাকাপাচারও হবে না।’
বিদেশি চকলেট আমদানিতে ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিদেশি চকলেটের ওপর ট্যাক্স কমানো হয়েছে। আমি মনে করি, প্রয়োজন নেই। অর্থমন্ত্রীর নাতি-নাতনিরা হয়তো বিদেশি চকলেট পছন্দ করেন, তাই ট্যাক্স কমাতে পারেন।’
রিজার্ভ কমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রায় ২ লাখ বিদেশি কাজ করে। তারা পাঁচ-ছয় বিলিয়ন ডলার তাদের দেশে পাঠিয়ে থাকেন— যা রিজার্ভের ওপর চাপ ফেলছে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।’
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ, যা সব নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে।’
এই ব্যবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার পঞ্চম স্কিম হিসেবে ‘প্রত্যয়’ ঘোষণা করেছে। সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা আগামী ১ জুলাই যোগ দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে।’’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মঈন উদ্দিন বলেন, ‘কতিপয় দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। কানাডার বেগম পাড়ায়, আবুধাবী, মালয়েশিয়াতে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ অপকর্মের দায় নিতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাবো, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের দায়-দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা এবং এ সংসদ নিতে পারে না।’ বৈধ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যাতে এ টাকা ফেরত আসে, সেই উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান মঈন উদ্দিন।
টাকা পাচারকারীদের দুষ্কৃতিকারী বলে উল্লেখ করে স্বতন্ত্র এমপি মঈন উদ্দিন বলেন, ‘এ দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। প্রধানমন্ত্রী এটা করবেন বলে আশা করি।’
যশোর-৬ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যদি টাকা পাচার, হুন্ডি ও বেটিং সাইট বন্ধ করে দিতে পারে তাহলে ছয় মাস নয়, তিন মাসের মধ্যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। দেশে নামে-বেনামে অনেকগুলো বেটিং সাইট আছে, নিম্ন আয়ের মানুষেরাও তাদের অর্থ খোয়াচ্ছে। দেশের হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মুখ থুবড়ে পরছে অর্থনীতি। এতে নষ্ট হচ্ছে মানুষের সুখের সংসার, যার পেছনে আছে জুয়া। সবকিছু আমাদের চোখের সামনে হচ্ছে।’ অনলাইন বেটিং সাইট বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান স্বতন্ত্র এই এমপি।