শনিবার বঙ্গবাজারে নতুন বিপণি বিতানসহ ৪ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী

‘বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণি বিতান’সহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য তিন প্রকল্প হলো পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত আট সারির ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি (ইনার সার্কুলার রিং রোড)’, ধানমন্ডি লেকে ‘নজরুল সরোবর’ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ প্রকল্প। শনিবার (২৫ মে) সকাল ১০টায় এই চার প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ মে) বিকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রস্তুতির খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেন।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানস্থলের প্রস্তুতি দেখছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস

আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন করার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবাজার মার্কেটে ১৯৯৫ সালে একবার আগুন লাগে। এরপর আবার ২০১৮ সালে আগুন লাগে। তারপর আমরা এখানে সুপরিকল্পিত মার্কেট করার প্রকল্প গ্রহণ করি। তখন বেশ কিছু লোক বাধা দেয়। শুধু বাধা নয়, একটা রিটও করে। পরে হাইকোর্ট এটাকে স্থগিত করে দেয়।’

১০তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানে পাঁচটি সাধারণ সিঁড়ি ও ছয়টি অগ্নিপ্রস্থান সিঁড়িসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিপণী বিতানের প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা `বাহির‘ ও `প্রবেশ‘ পথ থাকবে। ভবনে বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক কক্ষ এবং প্রতিটি ব্লকের প্রতি তলায় চারটি করে শৌচাগার থাকবে। এ ছাড়া ভবনের ভূমিতলে ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে।

পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আট সারির বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি'র নির্মাণকাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৯৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার নর্দমা (ড্রেন), ১০ কিলোমিটার পথচারী হাঁটার পথ (ফুটপাত), ৩টি উড়াল সেতু (ভেহিকেল ওভারপাস), ৩টি পথচারী পারাপার সেতু (ওভারব্রিজ), দুই কিলোমিটার সংরক্ষণকারী দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল), তিনটি মসজিদ, ছয়টি যানবাহন বিরতির স্থান (বাস-বে) ও ছয়টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকা শহরের ভেতরে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমার পাশাপাশি বহুলাংশে যানজট নিরসন হবে। 

ধানমন্ডি লেকে নজরুল সরোবরের নকশা

নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ধানমন্ডি হ্রদে নজরুল সরোবর নির্মাণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। শনিবার এই কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে ‘নজরুল সরোবর’ নামের উন্মুক্ত বিনোদন মঞ্চে একটি ঘাটলা, উন্মুক্ত মিলনায়তন, পথচারীদের হাঁটার পথ, গণপরিসর, রেস্তোরাঁ, বসার স্থান (বেঞ্চ), দৃষ্টিনন্দন বাতি, পর্যাপ্ত সবুজায়ন ও শব্দযন্ত্র (সাউন্ড সিস্টেম) স্থাপনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নজরুল ইসলামের স্মৃতিময় মুহূর্ত ও সাহিত্যকর্ম সংবলিত ফলক স্থাপন করা হবে। 

শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পার্কের নকশা

এ ছাড়া শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যানের আধুনিকীকরণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (শাহবাগে জিয়া শিশু পার্কের নতুন নাম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান করা হয়েছে)। প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিশু উদ্যানের আধুনিকায়নের কাজ করা হবে। ১৯৭৯ সালে স্থাপিত এই পার্কে আগে ১১টি রাইড ছিল। আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেখানে মেগা ডিস্ক'ও, সুপার এয়ার রেস, ফ্লাইং ক্যারোস্যাল, গ্যালিয়ন, ১২ডি থিয়েটার, মাইন কোস্টার, ক্লাইম্বিং কার, সুপার হ্যাপি সুইং, ওয়াটার ম্যানিয়াসহ অত্যাধুনিক নতুন ১৫ ধরনের রাইড বসানো হবে। 

এছাড়াও আগত দর্শনার্থীদের জন্য শৌচাগার, চত্বর, রেস্তোরাঁ, বিশ্রামস্থল, প্রশস্ত হাঁটার পথ, বসার আসন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সংযোজন করা হয়েছে।