বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভিসার কড়াকড়ি যে একটা প্রধান সমস্যা, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ ইদানিং তাদের ভিসা-পদ্ধতি অনেক সরল করে ফেলেছে, কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভারতে আসার ভিসা জোগাড় করতে এখনও হামেশাই প্রচুর ভোগান্তি হয়। হঠাৎ করে ঢাকা থেকে তাদের দিল্লি বা চেন্নাই দৌড়াতে হলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে ভিসা জোগাড় করা যে প্রায় অসম্ভব, সেটাও সবাই জানেন।
এই সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান নিয়ে আসছে ‘ইন্ডিয়া বিজনেস কার্ড’। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪-তে কাঠমান্ডুর সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে কথা দিয়েছিলেন, সার্ক দেশগুলোর জন্য ভারত বিজনেস ভিসা পাওয়ার পদ্ধতি অনেক সহজ করবে। সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে বেশ দেরি হলো ঠিকই। কিন্তু শেষপর্যন্ত সার্কভুক্ত সব দেশের জন্যই ভারত তাদের দেওয়া অঙ্গীকার রক্ষা করছে, এমনকি তার আওতা থেকে পাকিস্তানও বাদ যাচ্ছে না।
বাংলা ট্রিবিউনকে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমরা ১ এপ্রিল থেকেই এই ‘ইন্ডিয়া বিজনেস কার্ড’ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করার পরিকল্পনা করেছি। বস্তুত, নাসিকের ইন্ডিয়া সিকিওরিটি প্রেসে ইতোমধ্যেই এই কার্ড ছাপানোর অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে । ফলে খুব অল্পদিনের মধ্যেই এই ব্যবস্থা শুরু হয়ে যাবে বলে আমরা নিশ্চিত।’’
এই ‘ইন্ডিয়া বিজনেস কার্ড’ জিনিসটা আসলে কী রকম হতে যাচ্ছে? বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে:
১. এটা হবে পাসপোর্টের মতোই দেখতে একটা ছোট বুকলেট, তবে অনেক সরু। ওপরে লেখা থাকবে ‘ইন্ডিয়া বিজনেস কার্ড’, আর সঙ্গে সার্ক সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে একটি বিশেষ ‘লোগো’।
২. বাংলাদেশসহ সার্কের সব দেশের ‘হাইলি রেপুটেড’ (সম্মানিত) ব্যবসায়ীরা এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অবেদন মঞ্জুর হলে এই কার্ড তাদের নামে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য ইস্যু করা হবে ।
৩. সেই পাঁচ বছরের মধ্যে তারা যতবার খুশি ভারতে যেতে পারবেন, ব্যবসায়িক কাজে ভারতের যে কোনও প্রান্তে যেতে পারবেন। সেই কারণেই এটাকে বলা হচ্ছে ‘মাল্টিপল অ্যান্ট্রি, মাল্টি-সিটি ভিসা’র সমতুল্য।
পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের এই কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে অবশ্য কিছু বাড়তি বিধিনিষেধও থাকবে। যেমন, ন্যূনতম এক কোটি ভারতীয় রুপি মূল্যের শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হলে, বা বার্ষিক আয় দশ লাখ রুপির বেশি হলে তবেই তারা এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপের ব্যবসায়ীদের জন্য অবশ্য এমন কোনও কড়াকড়ি থাকছে না । আর নেপাল ও ভুটানের ব্যবসায়ীদের ভারতে যেতে কখনওই ভিসার প্রয়োজন হয় না।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর নাহিদ রশিদও এই ‘ইন্ডিয়া বিজনেস কার্ড’-এর ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
রবিবার তিনি এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আগের তুলনায় ভারত তাদের বিজনেস ভিসা পাওয়ার পদ্ধতি অনেকটা সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও দেখা যায়, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের একেক জনের অভিজ্ঞতা একেক রকম। কে কত সহজে ভারতের ভিসা জোগাড় করতে পারছেন, এটা অনেক সময় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপরও নির্ভর করে। ফলে ভারত এই বিজনেস কার্ডটা চালু করলে পদ্ধতিটা অনেক স্ট্যান্ডার্ডাইজড ও সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস’।
দিল্লির নর্থ ব্লকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বিশ্বাস করছেন, বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া বিজনেস কার্ড হবে একটি ‘গেমচেঞ্জার’- যা বদলে দেবে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াতের ব্যাকরণটাকেই!
/এপিএইচ/
আপ: এইচকে