যেসব কারণে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি

তিন কারণে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে সরকারি মালিকানাধীন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি মানিকগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এক হাজার ৯০৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, তিন কারণে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে সরকারি মালিকানাধীন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড মানিকগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কারণগুলো হচ্ছে— ঢাকার তেজগাঁওস্থ এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের প্ল্যান্টটি (ইডিসিএল) ৬০ বছরের পুরাতন ও জীর্ণ। এ কারণে  প্ল্যান্টটি মানিকগঞ্জে স্থানান্তরপূর্বক কারেন্ট গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস (সিজিএমপি) নীতিমালা অনুসরণ করে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী প্ল্যান্ট স্থাপন করা। অত্যাবশ্যক ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের উৎপাদন বাড়িয়ে সরকারি খাতে ওষুধের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতকে শক্তিশালী করা। ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে ওষুধের আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মানিকগঞ্জ সদরে ৩১ দশমিক ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ২ দশমিক ২০ লাখ  ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। ২৪টি বিভিন্ন স্থাপনা বা অনাবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে যার আয়তন হবে ৯ লাখ ৬৪ লাখ বর্গফুট।  প্রকল্পের অভ্যন্তরে অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সীমানা দেওয়াল, সেন্ট্রাল ড্রেনেজ, রিজারভার, ফুটপাত, ওয়াকওয়ে, ইউটিলিটি ব্রিজ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ৬টি ওয়াচ টাওয়ার ও ১টি ডিজিটাল পোট্রেট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ১১৬টি আসবাবপত্র ও ২৮৪টি অফিস সরঞ্জাম ৭২০টি কম্পিউটার ও ৪টি কম্পিউটার সফটওয়ার ৪০ হাজার ৫০০ বর্গমিটার ল্যান্ডস্কেপিং এবং ১ হাজার ৪৬৪ জনমাস পরামর্শক সেবা কেনা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক সকল স্তরের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের (কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) জন্য জরুরি ওষুধ উৎপাদনের বিষয়সহ স্বাস্থ্য সেবার সামগ্রিক উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যার সঙ্গে প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা বিভাগ।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে উপস্থাপনের আগে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে জানানো হয়েছে- প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে (সিজিএমপি) নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ গুণগতমানের বর্ধিত পরিমাণ ওষুধ উৎপাদনের মাধ্যমে সরকারি খাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ওষুধ সরবরাহে বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে সরকারি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত শক্তিশালী হবে।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক-এ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারের চিকিৎসা সেবা বাড়বে। ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে ঔষধের আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব হবে।