ব্রেক্সিট, আফগানিস্তান, কোভিড সহযোগিতা

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সম্পর্ক নিয়ে ঢাকা-লন্ডনের মধ্যে আলোচনা

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ে শেষ আনুষ্ঠানিক বৈঠক (স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ) হয়েছিল ২০১৯ এর এপ্রিলে ঢাকায়। এরপর সারা বিশ্বে ও এই অঞ্চলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেছে, কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে সারা বিশ্ব। এ ছাড়া মিয়ানমারে সামরিক সরকার বিরাজ করছে এবং আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠন হতে যাচ্ছে।

এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কীভাবে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করতে পারে এবং একসঙ্গে কাজ করতে পারে- সেটি নিয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ বার্টনের মধ্যে আগামী বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) যে রাজনৈতিক বৈঠক হবে তাতে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা, কোভিড সহযোগিতা, রোহিঙ্গা, আফগান পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বাণিজ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেছে যুক্তরাজ্য। আগে ইইউ নীতির অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারিত হতো, সেটি এখন আর দেশটির জন্য প্রযোজ্য নয়। ফলে ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক কী হবে সেটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সুশাসন, মানবাধিকার, শ্রমাধিকার, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাসহ অনেক বিষয় রয়েছে; যেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।

সচিব বলেন, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের রেড লিস্টে রয়েছে বাংলাদেশ এবং আমাদের পক্ষ থেকে জোরালো যুক্তি থাকবে এটি যাতে তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশি দক্ষ পেশাজীবীরা যাতে করে ওই দেশে কাজের সুযোগ যায় সেটি নিয়েও আলোচনার সুযোগ আছে।

আফগান-মিয়ানমার পরিস্থিতি

এ অঞ্চলে বছরের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের পুনরুত্থান।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি কাতার ও পাকিস্তান সফর করেছেন। ফলে আফগানিস্তান নিয়ে তারা কী চিন্তা করছে- সেটি জানার সুযোগ হবে। একইসঙ্গে মিয়ানমার নিয়ে আমরা কী চিন্তা করছি সেটিও তাদেরকে আমরা জানাতে পারবো।

কোভিড সহযোগিতা

পররাষ্ট্র সচিব জানান, সব দেশের সঙ্গে আমরা কোভিড সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। এ বিষয়ে নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাজ্য ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওই দেশের সরকার। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতি যে উন্নত হচ্ছে- সে বিষয়টি আমরা তুলে ধরবো। সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করবো।

বাণিজ্য

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে জিএসপি সুবিধা পায়, সেটি বিবেচনা করছে যুক্তরাজ্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব আমরা তাদেরকে জানাবো।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা আশা করছি যুক্তরাজ্য কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করতে চায় এবং কোন কোন বিষয়ে সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করে, সেটি তারা আমাদেরকে জানাবে।

নতুন ক্ষেত্রে সংলাপ

দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের স্ট্র্যাটেজিক সংলাপের পাশাপাশি আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংলাপ চায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি একই ধরনের সংলাপ বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও অভিবাসনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও হতে পারে।’