সাধারণত ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয় বোরো মৌসুম। বীজতলা তৈরি এবং বোরো ধানের চারা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে কৃষক ধান উৎপাদনের কাজ শুরু করে। এখন দেশের প্রধান ধান উৎপাদন মৌসুম হিসেবে বোরো মৌসুমকেই বিবেচনা করা হয়।
রবিবার (২০ ডিসেম্বর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকায় ১৩ দশমিক ৫, ময়মনসিংহ ১০ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ১৩ দশমিক ২. সিলেটে ১১ দশমিক ৭ রাজশাহীতে ১০দশমিক ৪, রংপুরে ১১, খুলনায় ১০ দশমিক ৫ এবং বরিশালে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
তাপমাত্রার এই নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের প্রধান ধান উৎপাদন এলাকা উত্তরাঞ্চলে কৃষককে বীজতলা নিয়ে ভুগতে হবে। সমস্যার সমাধানে স্থানীয় কৃষি অফিসগুলোর পরামর্শ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এছাড়া অধিদফতরের ওয়েব সাইটেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে কৃষি আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. মিজানুর রহমান জানান, সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই ক্ষতি হতে শুরু করে বীজতলার। এই সময় তাপমাত্রা সাধারণত ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। এটাকে আমরা বলি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এরপর যদি তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হয় তাহলে আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়। গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৬.৬। এই তাপমাত্রা যদি দুই তিনদিন থাকে তাহলে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চললে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে এই তাপমাত্রা যদি ৮/১০ দিন স্থায়ী হয় তাহলে বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
তিনি জানান, এই ধরনের তাপমাত্রা সাধারণত উত্তরাঞ্চলের দিকে বেশি থাকে। এছাড়া মধ্যাঞ্চলের কিছু এলাকায় দিন কয়েকের জন্য এমন হতে পারে। ফলে এসব এলাকার বীজতলার ক্ষেত্রেই সাধারণত বেশি সমস্যা হয়।
উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, দিনের বেলা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে। যাতে কুয়াশা বা শিশির না পড়ে। আর শিশির পড়লেও সকালে একটা দড়ি জমির একবারে শেষ মাথায় ধরে মাটির একেবারে কাছাকাছি রেখে এক মাথা থেকে অন্য মাথায় দড়িটি নিয়ে যেতে হবে যাতে করে বীজতলার চারাগুলোর মাথায় জমে থাকা শিশির ঝরে যায়। এছাড়া সন্ধ্যার পর গভীর নলকূপ দিয়ে বীজতলায় সেচের পানি দিয়ে তা সারারাত রেখে দিতে হবে। সকালে সেই পানি ছেড়ে দিতে হবে। সন্ধ্যায় যে পানি মাটির নিচ থেকে তোলা হয় তা গরম থাকে, এই পানি বীজতলাকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে, চলতি বছর ১১ লাখ ৪ হাজার হেক্টরে হবে হাইব্রিড ধানের চাষ করা হবে। মূলত দেশে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫ লাখ কৃষকের মধ্যে হাইব্রিড বোরো বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। বিনামূল্যে হাইব্রিড বীজ পাওয়াতে গত বছরের তুলনায় এবার ধানের উৎপাদন আরও বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।