মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার

বাংলাদেশ অবজারভার, ২৪ অক্টোবর ১৯৭২(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৩ অক্টোবরের ঘটনা।)

দেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে ছাত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেই বছরের এই দিনে আবারও মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের কথা বলেন ডাকসুর সাবেক নেতা আবদুল কুদ্দুস মাখন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার মাটিকে যখন আমরা শত্রুমুক্ত করতে পেরেছি, তখন তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এ দেশের মাটিতে বিশ্বের তৃতীয় মতবাদ হিসেবে মুজিববাদকে প্রতিষ্ঠিত করবোই। মোহাম্মদপুর মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত মোহাম্মদপুর আঞ্চলিক কমিটির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রশিদ, সভাপতিত্ব করেন খায়রুল আনাম পল্টু।

মাখন তার বক্তৃতায় বলেন, ‘জাতিকে এত স্বল্প সময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শাসনতন্ত্র দান করে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ ভাষণে তিনি একটি বিশেষ ছাত্র মহলের উদ্দেশে বলেন, ‘ওই বিশেষ ছাত্র সংগঠন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধোয়া তুলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত সমাজতন্ত্রকে বানচাল করার জন্য জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছে।’ তিনি সকল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিভ্রান্তিকর আহ্বানে কর্ণপাত না করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

শহীদ অফিসারদের স্ত্রীরা গণভবনে

শহীদ অফিসারদের বিধবা স্ত্রীরা গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মাল্যভূষিত করেন।  বিশ্ব শান্তি পরিষদের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তিতে বঙ্গবন্ধুকে তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন বলে জানানো হয়। বাসসের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করে দৈনিক বাংলা। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী আকসাদ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। আন্তিয়াগোতে বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদক দেওয়া হয়। আলী আকসাদ সেই বৈঠকে যোগদান করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ অক্টোবর ১৯৭২আরও নতুন সংশোধনী দিয়েছে কমিটি

খসড়া সংবিধানের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব যাচাই-বাছাই অব্যাহত আছে। ২৪ অক্টোবরের পত্রিকার খবর অনুযায়ী, নতুন করে আরও ৩৫টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব ‍গৃহীত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে নতুন করে আরও কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রায় ১০টি ধারা সম্পর্কে সংশোধনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ পর্যন্ত কতটি সংশোধনী পাওয়া গেছে, সংসদীয় দলের পরবর্তী বৈঠকে সেসব জানানো হবে এবং পরবর্তী বৈঠকের তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।

দৈনিক বাংলা, ২৪ অক্টোবর ১৯৭২

এক মাসে ৪ শতাধিক চোরাকারবারি গ্রেফতার

চোরাচালান প্রতিরোধ অভিযানের প্রথম সপ্তাহে এক চোরাচালানি নিহত হয়েছে এবং চার শতাধিক আটক করা হয়েছে। এই অভিযানে সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করছে। ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত আন্তবাহিনী জনসংযোগ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২২৩ ব্যক্তিকে চোরাচালান অভিযানে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, যারা কোনও প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিল। অপারেশন গোল্ডেন ফাইবার কোড নামযুক্ত এই অভিযান শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে। যদিও দেশ স্বাধীনের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্নভাবে চোরাচালান ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলেন। অভিযানের প্রথম সপ্তাহে উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে—সোনা ১২০ তোলা, টেন্ডুপাতা ৭৮ বান্ডিল, টায়ার, সিগারেট, ৪২ হাজার টাকার তুলা ও রুপা দেড় মণ। এছাড়া চাল, ডাল, কাপড়, শাড়ি থেকে শুরু করে সরিষা ও নারিকেল তেল আটক করা হয়।