আমার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ তামাশা নয়: বঙ্গবন্ধু

ফিরে দেখা ১৯৭২

বাংলাদেশের মাটিতে শোষকদের আর গজাতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তাদের যেকোনও অবস্থাতেই কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু চক্রান্তকারীদের কারণে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিলে আমার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ শুধু তামাশা নয়। আমি তাদের সংশোধনের জন্য সময় দিয়েছি মাত্র। বাংলাদেশে শোষকদের কোনও স্থান নেই।’

সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীদের রুখে দাঁড়াতে এবং এসব দুষ্কৃতিকারী নির্মূল করতে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সক্রিয় সহযোগিতা করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ৮ মে উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম দিনে বগুড়ায় এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের প্রতি এ আহ্বান জানান।

গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যেসব সরকারি কর্মকর্তা গণবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এসব পরজীবীদের শেষ করে দেওয়ার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাবেন।’ যমুনা নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি করা হবে বলে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, এমন কিছু সংখ্যক লোক বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।’ তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, এসব ষড়যন্ত্রকারী যদি বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের জন্য তিনি আবারও জনগণকে ডাক দেবেন। কঠোর হস্তে ও সম্মিলিতভাবে সশস্ত্র দালালদের রুখে দাঁড়াবার জন্য, প্রতিহত করার জন্য বঙ্গবন্ধু মোজাফফর ন্যাপ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আহ্বান জানান ও  বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গে রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের জনগণ তাদের যা কিছু ছিল, তা নিয়েই একটা সুসজ্জিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।’ তিনি সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীদের সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। এসব সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীরা বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের সমাজবিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে, ডাকাতি করছে। তিনি এর আগে বলেছিলেন, তাঁর আদেশ অমান্য করে যারা অস্ত্রশস্ত্র জমা দেয়নি, তারাই হলো আলবদর- রাজাকার। তিনি তাদের পাকড়াও করে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে জনগণকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এসব সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারী আপনাদের ওপর নির্যাতন চালালে আপনারা অবশ্যই তাদের রুখে দাঁড়াবেন।’ এক পর্যায়ে তিনি উপস্থিত জনতা তাদের রুখে দাঁড়াবেন কিনা জানতে চাইলে, তারা হাত তুলে সম্মতি জানায়।

11

উৎপাদন বাড়ানোর দাবি

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তর বঙ্গে সফরের প্রারম্ভে তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্ন সার্থক করে তোলার জন্য উৎপাদন আরও  বাড়ানোর আহ্বান জানান। একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে নজির স্থাপনের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন স্বাধীন। শোষকদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এখন দেশবাসীর কাজ হলো দেশ গড়া।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের এক মহৎ গুণ রয়েছে। তাহলো সবসময় সমস্যাকে জয় করার আমাদের দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘লোকের মুখে আবারও হাসি ফুটবে, আমরা আবারও সুখী হবো।’

চার মাসে যা করেছে সরকার

ক্ষমতা গ্রহণের চার মাস সময়কালে তাঁর সরকার যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন, তিনি সেগুলো উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ ও পরিবার পিছু একশ’ বিঘা জমির সীমানা নির্ধারণের কথা উল্লেখ করেন। সমাজতন্ত্রের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মূল শিল্প জাতীয়করণের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।    জনগণ কঠোর পরিশ্রম করে নতুন দেশ গড়ে তুলবে বলে তিনি গভীর আস্থা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতা নয়, আপনাদের ভালোবাসাই আমার কাম্য। ক্ষমতা নয়, আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে আমি মরতেও প্রস্তুত আছি।’