১৯৭২ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন। এদিন বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের আজীবন সদস্য হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়। এই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণ দেন। পরদিন ৭ মে দৈনিক বাংলায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মচারীও এসব ব্যক্তির পেছনে রয়েছেন। যেসব বিদেশি শক্তির বলে বলিয়ান হয়ে এখানে এখন কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েমের স্লোগান তোলা হয়েছে।’ সেসব বিদেশি শক্তির স্বরূপ উদঘাটন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য এরাই বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। জাহাজে করে চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এসে পৌঁছেছিল, সে সবই ছিল চীনের দেওয়া।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই জাহাজটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরের মানুষের জন্য সেটি বিপজ্জনক হবে বলে এই পরিকল্পনা কার্যকরী হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, এসব ব্যক্তি একদিকে ধর্মান্ধতা ছড়াচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথাও বলছে। একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তারা দুই বিপরীতধর্মী আদর্শ প্রচার করছে।’ দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চরম দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ও রাজাকাররা চরম বামপন্থীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি বা সংবাদপত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন নিবন্ধ লিখে সমাজতন্ত্র কায়েম করা যায় না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হবেই। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকার এরই মধ্যে মিল-কলকারখানা ও ব্যাংক জাতীয়করণ করেছে।’ এদেশে কোনোভাবেই আর পুঁজিবাদী মনোভাব গড়ে উঠতে দেওয়া হবে না বলে তিনি ঘোষণা করেন।
ছাত্রসমাজের প্রতি
বঙ্গবন্ধু পড়াশোনায় মনোনিবেশে ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এবার আপনারা পড়াশোনা করুন।’ শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা ছাড়া যোগ্য নেতৃত্ব কখনও গড়ে ওঠে না। সমাজের সব ক্ষেত্রেই যোগ্য ব্যক্তিত্বের এখন খুবই প্রয়োজন।’ গ্রামে মা-বাবার কাছে গিয়ে ছুটি কাটানোর আহ্বান জানিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তাদের উচিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখা এবং তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া।’
এই অনুষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধু ডাকসুর আজীবন সদস্য হন। এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংসদের আজীবন সদস্যপদ প্রদান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল।