প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে দুর্নীতি: তৃতীয় পর্ব

তদবিরেই চলে শিক্ষক বদলি

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

বদলির জন্য মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হয়ে শূন্যপদের বিপরীতে অনুমোদন পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত বদলি হতে পারেন না প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। প্রচলিত এ নিয়ম কাজে লাগছে না জানিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, যাদের তদবিরের ক্ষমতা আছে, কেবল তাদেরই অগ্রাধিকার দিয়ে বদলি করা হচ্ছে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে বদলি করা হয় না।

তবে এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন এবং অধিদফরের মহাপরিচালক ড. এএফএম মঞ্জুর কাদিরের ভাষ্য, ‘বদলি নিয়ে কোনও দুর্নীতি হবে না।’

সচিব মো.আকরাম আল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ন্যায্যতার ভিত্তিতেই বদলির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাপরিচালক দুর্নীতির প্রশ্রয় দেবেন না।’ তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এএফএম মঞ্জুর কাদির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও দুর্নীতি হবে না। আমরা কারও তদবির শুনবো না। নির্ধারিত শূন্যপদের বিপরীতে যা বদলি করা সম্ভব, তা-ই করা হবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে,অধিদফতর থেকে গত ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের ৩১ জন সহকারী শিক্ষককে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। যদিও এদের মধ্যে শূন্যপদের বিপরীতে মাত্র দুজনের বদলির অনুমোদন ছিল। বাকি ২৯ জনই বদলি হতে পারেননি।

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, এবার চট্টগ্রামে বদলির আবেদন পড়েছে চার শতাধিক। এর মধ্যে ৩০ জনের শূন্যপদ পূরণ করে স্কুলের নামসহ অধিদফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। শূন্যপদের বিপরীতে অনুমোদন নিয়ে আসা শিক্ষকরা বলছেন, তাদের মধ্যে মাত্র দুইজন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাকি ২৯টি পদেও শিক্ষক বদলি করা হয়েছে, তবে অনুমোদিতদের না করে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অন্যদেরকে এসব পদে বদলি করা হয়।

গত ২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষা অধিদফতরের গেটে ও গেটের বাইরে শিক্ষকরা বদলির জন্য ভিড় জমিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করে এই শিক্ষকরা বলছেন, ‘যাদের তদবিরের জোর নেই, তারা বদলি হতে পারেন না।’ তারপরও বদলির শেষ সময়ে শূন্যপদের অনুমোদন নিয়ে আসা শিক্ষক ও তাদের স্বজনরা অধিদফতরের সামনে অপেক্ষা করছেন তারা ভালো কোনও খবর নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, বললেন কেউ কেউ।

এদিকে শিক্ষক ও তাদের স্বজনদের ভিড় সামলাতে শুক্র (২৯ মার্চ) ও শনিবার (৩০ মার্চ) বন্ধের দিনেও অফিস করেছেন মহাপরিচালক।

চট্টগ্রাম থেকে আসা একজন শিক্ষকের স্বজন মোহাম্মদ মনছুর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক মাসের চেষ্টায় অনেক টাকা খরচ করে শূন্যপদের অনুমোদন নিয়ে ২৫ মার্চ বদলির আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। অথচ এখন বদলির আদেশে দেখছি— অনুমোদন না নেওয়া শিক্ষকরা বদলি হয়েছেন।’ বড় বড় মন্ত্রীর তদবিরে এসব সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাইমারির শিক্ষকদের বদলিতে অনেক সিনিয়র মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবির রয়েছে এবার সব চেয়ে বেশি। আর এই তদবিরের কারণে অনেকটা বিব্রত ও বেসামাল হয়ে পড়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ স্বাক্ষরিত আদেশে একযোগে রাজধানীতে বদলি করা হয়েছে ৪০ শিক্ষককে। একই দিন রংপুরে বদলি করা হয় ১২ শিক্ষককে। আর ২৮ মার্চ স্বাক্ষরিত ও ৩ এপ্রিল প্রকাশিত আদেশে চট্টগ্রামের ৩১ শিক্ষককে বদলি করা হয়। 

আরও পড়ুন:

শিক্ষক বদলিতে যত ভোগান্তি
ঘুষ ও জোরালো তদবির না থাকলে ফাইল গায়েব!