সূত্র জানায়, দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন মহিষের জাত উন্নয়ন এবং মহিষের সংখ্যা বাড়ানো, দুগ্ধ উৎপাদনে মহিষের ভূমিকা জোরদার, আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, মহিষ খামারিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং মহিষজাত খাদ্যপণ্য গ্রহণে জনসচেতনতা বাড়াতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। গত ২৫ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গরুর তুলনায় মহিষের দৈহিক বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো, গরুর তুলনায় মহিষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং এরা সামুদ্রিক জোয়ার-ভাটার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে পারে। মহিষের মাংস ও দুধে কোলেস্টরলের মাত্রা গুরুর মাংস ও দুধ অপেক্ষা কম, তাই স্বাস্থ্যসম্মত। মহিষ হলো পৃথিবীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদনকারী গবাদি প্রাণি। ভারতসহ ভূমধ্যসাগরীয় কয়েকটি দেশে উন্নত প্রযুক্তি, প্রজনন কৌশল ও ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে মহিষের দুধ উৎপাদন অনেকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বাগেরহাটে মহিষ খামারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ‘খুলনা থেকে মোংলা রুটে রেলপথ নির্মাণের কারণে বাগেরহাট সরকারি মহিষ খামারের শেডসহ অন্যান্য স্থাপনা স্থানান্তর’ শীর্ষক প্রস্তাবিত অননুমোদিত প্রকল্পটিকে আলোচ্য প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত করার অনুরোধ করা হলে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা আলোচ্য দুটি প্রকল্পকে একীভূত করে ‘মহিষ উন্নয়ন (২য় পর্যায়)’ শিরোনামে প্রকল্পটি ১৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন মহিষের জাত উন্নয়ন এবং মহিষের সংখ্যা বৃদ্ধি, দুগ্ধ উৎপাদনে মহিষের ভূমিকা জোরদারকরণ, মহিষ খামারিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং মহিষজাত খাদ্যপণ্য গ্রহণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য।
এ প্রকল্পের আওতায় ছয় হাজার মহিষ পালনকারী খামারি এবং ৩৬০ জন কৃত্রিম প্রজননকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মহিষের জেনেটিক উন্নয়নের জন্য ক্রসব্রিডিং, সিলেকটিভ ব্রিডিং এবং ইন্টার সি মেটিং প্রতিস্থাপন বিষয়ক গবেষণাও করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। সিলেট অঞ্চলের সোয়ামপ মহিষের হৃষ্টপুষ্টকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। বাগেরহাট মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে ১৬টি এবং টাঙ্গাইলে মহিষের বাছুর পালন কেন্দ্রে একটি শেড নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সাভারের মহিষের খামার এবং কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরিতে প্রশিক্ষণ কাম ডরমেটরি ভবন নির্মাণ করা হবে। বিদেশ থেকে উন্নত জাতের মহিষ কেনা হবে ১৬টি। স্থানীয় উৎস থেকে কেনা হবে ২০০টি মহিষ। এছাড়া সাভারের কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরির জন্য প্রকল্পের আওতায় রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও রি-এজেন্ট এবং ল্যাব যন্ত্রপাতি ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন সামগ্রীও কেনা হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে মহিষের দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া দেশের মানুষের মধ্যে মহিষজাত খাদ্যপণ্য গ্রহণে জনসচেতনতাও বাড়বে।