২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রাজধানীর রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে ১০ জন নিহত হন এবং অনেকে আহত হন। পরে এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শুরু হয়। ঘটনার প্রায় ১৪ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।
বিচারিক আদালতের রায়ে মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন ও মাওলানা তাজউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেওয়া হয়।
এছাড়াও মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েলকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।
পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও অন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানির জন্য আসে। কিন্তু সেখানে প্রায় চার বছর ধরেই মামলাটি শুনানি পর্যন্তই থেমে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘এতদিন মামলাটি হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে ছিল। এটি এখন আমাদের বেঞ্চে দেওয়া হয়েছে। মাত্র দু’মাস আগে আমরা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাতে পেয়েছি। এর আগে উচ্চ আদালতে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করা হয়। সেখানে শুনানি শুরু হলেও তা আর শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত থেকে যায়। তখন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কিছু অসমাপ্ত বক্তব্য প্রদানের জন্য ছয় সপ্তাহ সময় নেন। কিন্তু এরপর থেকে এ মামলায় শুনানি অসমাপ্ত থেকে যায়।’
তিনি আরও বলেন, শুনানি অসমাপ্ত থাকা অবস্থাতেই মামলাটি আবার বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও ভীষ্মদেব কুমার চক্রবর্তীর বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। যার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি শুনানির জন্য গত ১২ এপ্রিলের কার্যতালিকায় (কজ লিস্ট) রাখা হয়। কিন্তু অন্য মামলার শুনানির শেষ না হওয়ায় তালিকায় ১৭ নম্বরে থাকা এ মামলার শুনানি এদিনও করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কোর্টে মামলাটি গত ১২ এপ্রিল শুনানির জন্য তালিকায় রাখা ছিল। কিন্তু শুনানি করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টে এখন ২০১২ সালের ডেথ রেফারেন্স সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে। আর রমনা বোমা হামলার মামলার ডেথ রেফারেন্স হল ২০১৪ সালের। তারপরও মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে রাষ্ট্রপক্ষের নির্দেশ রয়েছে। তাই শুনানি শুরু হলে তা ১ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি দ্রুত মামলাটির শুনানি করা প্রয়োজন। অবকাশকালীন ছুটি শেষে হাইকোর্ট ৩ মে খুলবে। আশা করছি তখন এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’