২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে সীমান্তে বিএসএফের সাবেক সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মৃত্যু হয় বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীর। তার মৃতদেহ দীর্ঘসময় কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে ছিল। যে ছবি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। বিএসএফের বিশেষ আদালত দু’দফায় অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর ন্যায়বিচারের দাবিতে কিরিটি রায় ও ফেলানীর পরিবার যৌথভাবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করেছিলেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি এটি শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
কেন সীমান্ত হত্যা থামছে না, এমন প্রশ্নে কিরিটি রায় বলেন, ‘বিভিন্ন সময় গরু চোরাচালান বন্ধ না হওয়াকে দায়ী করা হয়। কিন্তু বিষয়টি হলো ধরুন, যে ব্যবসাটা ভারতের মাটিতে বেআইনি; ভারত থেকে বাংলাদেশে গেলে ৫০০ টাকা জমা দিলেই সেটি আইনি হয়। সেই ৫০০ টাকায় ভারতের বিএসএফ, বাংলাদেশের বিজিবি, ভারতের কাস্টমস, পুলিশ, প্রশাসন সবার ভাগ থাকে। কেননা, যে গরুগুলো কুড়িগ্রাম, রংপুর বা খুলনা, যশোর দিয়ে পার করা হয়; সেই গরুগুলো পশ্চিমবঙ্গের নয়, হরিয়ানা বা রাজস্থানের। এগুলো পাচার হচ্ছে, ভারতের মধ্যে এতদূর থেকে আসে ট্রেনে, বাসে, লরিতে; সবার সামনে দিয়েই আসে। অথচ কিভাবে ঘটছে, সেটি তারা জানেন না? প্রাপ্য অংশ না পেলে এমনই ঘটে? এটা তো ঘুষের ব্যাপার।’
বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি হওয়ার পরও কেন সীমান্ত হাটগুলো নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা হচ্ছে না, সেটির সমালোচনা করে কিরিটি রায় বলেন, ‘চুক্তি হয়েছে সীমান্তে হাট হবে। বর্ডারে হাট হয় না। কেন হবে না? সপ্তাহে একদিন হাট হবে পাঁচ কিলোমিটার পর পর; দুই দেশের মানুষ মালামাল বিক্রি করবে। যা কেনাবেচা হবে দুই সরকারই সেখানে থেকে ট্যাক্স নেবে, তাহলেই মিটে যায়। সব আইনি পন্থায় হলো। তা না করে অমানবিকভাবে পিটিয়ে মেরে, হাত-পা ভেঙে এরকম করার কোনও মানে নেই।’
কেন কেবল বাংলা সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে সেই প্রশ্ন তুলে কিরিটি রায় বলেন, ‘আমি যা বলছি, তা ভারত বা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বলছি না। আমার কথা হলো, যা তারা পরস্পর বলছেন, তা কার্যকর কেন হবে না। তারা তো বন্ধুরাষ্ট্র। নেপাল-পশ্চিমবঙ্গ বর্ডার আছে, সেখানে তো এসব হচ্ছে না। বাংলাদেশ সীমান্তে হচ্ছে কেন? সীমান্তে গুলি করে নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধে ভারত বাংলাদেশকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কখনও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।’
মাসুম সচিব কিরিটি রায় বলেন, ‘অনেক সময় সীমান্তে বাঙালি সেনা কম, সেটি নিয়ে কথা বলা হয়। কিন্তু পাঞ্জাবি, বিহারি, কেরালার মানুষদের বাদ দিয়ে বাঙালিদের দিলে ভিন্ন কিছু হবে আমি মনে করি না। ওটা একটা সিস্টেম। আপনি যখন সংবাদপত্র অফিসে ঢুকছেন, তখন আপনি সাংবাদিক। যখন আপনি আপনার বাড়িতে ঢুকছেন সত্ত্বাটাই পাল্টে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও আপনি যখন বিএসএফ এ ঢুকছেন এবং বাংলায় আপনার দায়িত্ব তখন কেমন যেন আপনি ঘুষ-মারধরের সিস্টেমে ঢুকে যান।’
এ পরিস্থিতিতে করণীয় বলতে গিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের ওপর নিরন্তর চাপ সৃষ্টি করার কোনও বিকল্প নেই। সরকার যে আমলাদের দ্বারা পরিচালিত, যেসব জায়গায় দায়বদ্ধ– সেখানে কথা তোলা। ভারত-বাংলাদেশ দু’পক্ষই যেসব গ্রুপের সদস্য–সেখানে কথাগুলো উত্থাপন করা।’