ঈদ মানেই আনন্দ। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই আনন্দে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রূপ। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে ঈদের আনন্দের ধরনেও পরিবর্তন আসে। এক দুই বছরে এই ব্যবধান স্পষ্ট করে বোঝা না গেলেও একেবারে শৈশবের ঈদের সঙ্গে পরিণত বয়সের ঈদের তুলনা করলেই পার্থক্যটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তখন বেশির ভাগ মানুষ পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, তাদের শৈশবের ঈদের স্মৃতিটাই বেশি মধুর, আনন্দময় ছিল। শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বের পাশপাশি রাজনীতিবিদের শৈশবের ঈদ কেমন হতো, এই নিয়ে সবার না হোক, অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে। কেমন ছিল রাজনীতিবিদদের শৈশব, কেমন কাটতো ঈদের সময়, আনন্দই বা কেমন হতো। এসম বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত কয়েকজনের শৈশবের ঈদস্মৃতি বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী: জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ঈদ সব সময়েই আনন্দের। ছোট বেলায় সববয়সী ও বন্ধুবান্ধব একত্রিত হয়ে নতুন কাপড় পরে বাড়িবাড়ি যেতাম। সবার বাড়িতে গিয়ে সেমাই খাওয়া হতো। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে আইসক্রিম খাওয়া হতো। এগুলোই করে বেড়াতাম। আগে যৌথপরিবার ছিল। পরিবারে চাচাতো খালাতো ভাইবোন মিলে সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সী অনেকের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ থাকত। যৌথপরিবার ভেঙে এখন একক পরিবার হওয়ায় সেই সমবয়সীদের সেভাবে কাছে পাওয়া যায় না। আর স্কুলের বন্ধুবান্ধবরা তো ঈদের ছুটির একেকজন বাচ্চারা একেকদিক চলে যায়। আমাদের শৈশবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ ছিল। এখন সেটা অনেকটাই কমে গেছে।
রাশেদ খান মেনন: বাবার চাকরিসূত্রে শহরের পরিবেশে বড় হওয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঈদের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বলেন, ছোটবেলায় ঈদটা সত্যিই খুব ভালোভাবে কাটতো। তখন আজকের মতো এত ফ্যাশন ছিল না। ঈদের আগে আব্বা বাড়িতে দর্জি নিয়ে আসতেন জামাকাপড় তৈরির জন্য। দর্জি সব ভাইবোনের জামার মাপ নিয়ে সেগুলো তৈরি করে দিত। আমরা অপেক্ষা করতাম করে সেই জামাকাপড় হাতে পার তার জন্য। বাসায় সিমাইয়ের কলে সেমাই বানানো হতো। সেটা ঈদে রান্না হতো। ঈদের দিনে নতুন কাপড় পরে আব্বার সঙ্গে নামাজে যেতাম। খুবই আনন্দের বিষয় ছিল আমাদের জন্য সেই সময়কার ঈদগুলোতে। দিনগুলো ছিল অনেক বেশি আনন্দঘন, অনেক মধুর। তখন কোনও কৃত্রিমতা ছিল না। সবটাই পারিবারিক আমেজে হতো। এখনও ঈদের দিন এলে সেই ছোটবেলার মজার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: শৈশবের ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, তাদের সময় অন্য দশজনের ঈদ যেভাবে কেটেছে, তার ঈদও একই রকম কেটেছে। শৈশবে ঈদ সব থেকেই আনন্দময় ছিল। কারণ ওই সময় নিজের ওপর কোনও বাড়তি চাপ থাকে না। প্রত্যেকটা জিনিসই সুন্দর থাকে। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা। ঈদের দিন অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন কাপড় পরে বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যাওয়া, সেমাই খাওয়া—এসব অনেক আনন্দের ছিল।
বর্তমানে ঈদ উদযাপনে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের সময়ের তুলনায় বর্তমানে ঈদে বহু ফারাক দেখা যায়। আমাদের সময় ঈদ ছিল একটা পারিবারিক আনন্দ। বন্ধুবান্ধব একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, পাড়াবেড়ানো আর মুরব্বিদের সালাম করা ছিল অনেক আনন্দের। বর্তমানে এর কিছুটা রেওয়াজ থাকলেও তা আগের মতো নেই। এখন তো মানুষ চাঁদ দেখার জন্য সন্ধ্যাবেলা আকাশের দিকে না তাকিয়ে চাঁদের খবরের জন্য টেলিভিশন সেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন আমরা দেখি ঈদে পাড়ায়পাড়ায় মাইক বাজে গান বাজে, কোথাও কোথাও ফুর্তির নামে অতি বাড়াবাড়িও হয়। এটা অনেকটা সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আর এখন আরেকটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে, যারা উচ্চবিত্ত, তারা ঈদ করতে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। আর মধ্যবিত্তরা দেশের কোথাও ঈদ কাটাচ্ছেন। মানুষের জীবনে ব্যস্ততা বেড়ে যওয়ায় অন্য সময় ছুটি না পাওয়ার কারণে হয়তো ঈদের ছুটিটা তারা এভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন। অবশ্য কেউ কেউ আগের মতোই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করছেন।
নিজের খাদ্যাভাসের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, আমি ঈদে খাওয়া ধাওয়ার ওপর এখনও গুরুত্ব দেই না। তখনও দিতাম না। তবে নতুন কাপড়টা পরবো কোন সময় আর নামাজ পড়তে যাব কোন সময়, সেটাই চিন্তা করতাম।
ঈদের দিনের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ঈদের নামাজের পর আমরা দল বেঁধে গিয়ে কার বাড়িতে কী রান্না হলো, কারা কত প্রকারের মিষ্টান্ন রেঁধেছেন, এটা নিয়ে বাহাস হতো।
/এমএনএইচ/
আরও পড়ুন:
শোলাকিয়ায় বোমা বিস্ফোরণে ১ পুলিশ নিহত, আহত ১২
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত