পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত সরবরাহের আশ্বাস আছে। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই। বাস্তব অবস্থা আগে যেমন ছিল, তেমনি আছে। কিভাবে এসব আশ্বাস কার্যকর হবে বরাবরের মতো এবারও তা প্রশ্নবিদ্ধই হয়ে আছে।
বিদ্যুৎ ও পানি নিয়ে নগরবাসী ভাল নেই। দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে। আর নগরীর কোথাও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা। বহু এলাকায় এখনও ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ হচ্ছে। অনেক এলাকায় এই দুর্গন্ধযুক্ত পানিও পাওয়া যায় না। বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়নে পিডিবিসহ সংশ্লিষ্টদের নানা তৎপরতা থাকলেও পিছিয়ে আছে ঢাকা ওয়াসা। ওয়াসার এমডি আছেন বিদেশ সফরে। তার অনুপস্থিতিতে গাছাড়া ভাব চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
গ্রীষ্মের শেষ সময় চলছে। প্রকৃতি উত্তপ্ত। বিদ্যুৎ-পানির চাহিদা অনেক বেশি। বিদ্যমান উৎপাদন দিয়েই চাহিদা মেটাতে হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে। তাই রমজানে চাহিদা আরও বাড়লে লোডশেডিং ও পানি সংকট দু’টিই বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, বর্তমানে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। যদিও বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা দাবি করা হয় প্রায় পৌনে ১২ হাজার মেগাওয়াট। বাস্তবে পুরো ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। এ হিসেবে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবার।
পিডিবি জানিয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে এবার খরচ বেশি হলেও তেলভিত্তিক ৪৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখা হবে। এসব উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট। এটা করতে পারলে এবার সমস্যা তেমন হবে না। তবে বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে কোথাও কোথাও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ার পেছনে গ্যাস সংকটকে দায়ী করেছে পিডিবি। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য গ্যাসের চাহিদা ৬৫ কোটি ঘনফুট হলেও পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারছে ৪৫ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে এসব উৎপাদন কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে রমজানে আবাসিকে জ্বালানি গ্যাসের চাহিদাও বাড়ে বর্তমানের চাইতে ৫-৬ কোটি ঘনফুট বেশি।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট।
রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ওয়াসার পানির চাহিদা দৈনিক ২২৫-২৩০ কোটি লিটার। ওয়াসার দাবি এ পানি তারা সরবরাহ করতে পারছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। নগরীর বহু এলাকায় পানি পাওয়া যায় না। পুরনো লাইন পরিবর্তন না হওয়ায় ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি যাচ্ছে অনেক এলাকায়। এ অবস্থায় রমজান মাসে পানির চাহিদা বাড়ে। ফলে এবারও নগরবাসীকে পানি সংকটে পড়তে হবে- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ওয়াসার ঊর্ধ্বতন এক প্রকৌশলী।
গরমের এই দিনে বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহ পরিস্থিতি যখন ভাল যাচ্ছে না, তখন আশার কথা শোনালেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। রবিবার সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে বৈঠক করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা ওয়াসাকে সংকটপূর্ণ এলাকায় মানুষের ঘরে পানি পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, যেখানে সংকট হবে সেখানেই দ্রুত পানি পৌঁছে দিতে হবে। মন্ত্রী কন্ট্রোল রুম খোলারও নির্দেশ দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো প্রতিদিন সাত ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নাগরিকদের বাসাবাড়িতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে বলে আশা তার।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রমজানে গ্যাসের বাড়তি চাহিদা মেটাতে দেশের সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হবে। বিকাল পাঁচটা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ।
অন্যদিকে রমজান মাস শুরু হয়ে গেলেও ঢাকা ওয়াসা কোনও প্রস্তুতি দেখাতে পারেনি। এমনকি সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কন্ট্রোল রুম খোলার খবর পাওয়া যায়নি। এই বেহাল দশা সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ. খান বিদেশ অবস্থান করছেন। পানি ব্যবস্থাপনা দেখতে আজ পর্যন্ত ডিএমডি নিয়োগ করা হয়নি। এর ফলে রমজান মাসে পানি সরবরাহ কার্যক্রমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন:
অভিভাবকহীন রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার
মিরপুরে ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২
এবার ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলের বিরুদ্ধে শিক্ষক পেটানোর অভিযোগ
ওএফ/ এমএসএম/আপ- এপিএইচ/