সিসিটিভি ফুটেজ

হত্যা পরিকল্পিত, ‘মিল’ খুঁজে পাচ্ছে পুলিশ




পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করা হয়চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় সংগ্রহ করা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে উগ্রপন্থিদের হত্যার ধরনের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মিল পাচ্ছে পুলিশ। ফুটেজে দেখা গেছে, এক মিনিটেরও কম সময়ে সংগঠিত হয় এ হত্যাকাণ্ড। মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক জিইসি মোড় থেকে গিয়ে মাহমুদা আক্তার মিতুর সামনে হাজির হন। তাদের মধ্যে এক যুবক প্রথমে ছুরিকাঘাত করেন, আরেক যুবক গুলি করে চলে যান। সময় লাগে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ড।
ভিডিও ফুটেজ দেখে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকারীরা পেশাদার আর দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা দীর্ঘ পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যাকারীরা আগে থেকেই তার পিছু নিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, রোববার সকাল পৌনে ৭টায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে নগরীর জিইসি মোড়ে যাওয়ার সময় খুন হন মিতু। তাকে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এ কারণে তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি হত্যাকারীরা মাত্র এক মিনিটের মধ্যে তাদের খুনের অপারেশন শেষ করেন।
তিনি আরও বলেন, ভিডিও দেখে মনে হয়েছে হত্যাকারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে আগে থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান করছিল। জিইসি মোড়সংলগ্ন মিষ্টির দোকান ওয়েল ফুডের সামনে মাহমুদা আক্তার মিতুকে তারা প্রথমে ছুরিকাঘাত করে এবং পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। পুরো কাজ শেষ করতে তারা খুবই অল্প সময় নেয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যাকারীদের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, যে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল তার মাথায় হেলমেট ছিল। বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫। তার পেছনে দুজন বসা ছিল। মাঝখানে বসা যুবকের হাতে ছুরি ছিল। পেছনে বসা তৃতীয়জনের হাতে ছিল একটি পিস্তল।

উপ-কমিশনার পরিতোষ আরও জানান, মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবক প্রথমে মাহমুদা খানমকে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দেয়। তারপর মাঝখানে থাকা যুবক প্রথমে তার বুকে, হাতে ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তৃতীয়জন পিস্তল দিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে। প্রথম গুলিটি মিস হয় আর দ্বিতীয় গুলিটি কপালের বাঁ পাশে গিয়ে লাগে। তবে ঘটনাস্থলে তিনটি বুলেট পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দুটি অব্যবহৃত।

হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আনসার সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, সাড়ে ৬টার কাছাকাছি সময়ে আমি পরপর দুটি গুলির শব্দ শুনি। গেট খুলে বাইরে আসতেই দেখি তিন যুবক মোটরসাইকেলে করে দিকে গোলপাহাড়ের দিকে চলে যাচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৩০ গজ দূরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানান।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, হত্যাকাণ্ডে ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল ব্যবহার করা হয়। বাবুল বেশ কয়েকবার জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে হুমকি পেয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে বলেন, হত্যার পুরো ভিডিওচিত্র দেখে মনে হচ্ছে এই হত্যায় জঙ্গিরা জড়িত থাকতে পারে।

হত্যাকারীদের ধরতে র‌্যাব-পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র‌্যাব হত্যাকারীদের ধরতে একসঙ্গে কাজ করছে।


/এমও/এজে