‘তোমাকে দেখে তো হতদরিদ্র মনে হয় না। তোমার বাবা এতদিন যেহেতু বাইরে রাখতে পারছে, আর কিছুদিনও পারবে বলে আমার মনে হয়। তুমি একটু কষ্ট করে বাইরেই থাকো। আগে পাঁচটা জামা কিনলে এখন দুইটা জামা কিনবে।’
আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে হলে সিটের আবেদনপত্র দিতে গেলে এক নারী শিক্ষার্থীকে এসব কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রহমতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ ইসমাত আরা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রাধ্যক্ষ।
এ নিয়ে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোব) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদা কনক।
সংবাদ সম্মেলনে তাহমিদা কনক বলেন, ফলাফলের ভিত্তিতে হলে সিট বণ্টন করা হলেও আমি বঞ্চিত হয়েছি। আমি সহ-পাঠ্যক্রম কাজের প্রমাণ হিসেবে আন্তর্জাতিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সনদ আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়ার পরও হলে সিট পাইনি। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষের কাছে গেলে তিনি বিভিন্ন কটূ কথা বলে উপহাস করেছেন। তিনি আমার পরিবার ও পোশাক নিয়ে কথা বলেছেন। প্রাধ্যক্ষ আমাকে বলেছেন, ‘তোমাকে দেখে হতদরিদ্র মনে হয় না। তুমি এতদিন যেহেতু হলের বাইরে থাকতে পেরেছো, এখন চাইলেই বাকি সময়গুলো মেসে থাকতে পারবে।’ আমি প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর কথা বললে তিনি বলেন, ‘তুমি কি আগের প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছো? প্রশাসন সিট দিলেই তোমাকে হলে তুলবো নাকি।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে হলে সিটের জন্য সাদা কাগজে আবেদনপত্র দিতে গেলে তিনি আবেদনপত্র ফিরিয়ে দেন। তখন বলেছেন, ‘তোমাকে দেখে তো হতদরিদ্র মনে হয় না। তোমার বাবা এতদিন তোমাকে বাইরে রাখতে পেরেছে, আরও কিছুদিন পারবে বলে আমার মনে হয়। তুমি কষ্ট করে বাইরেই থাকো। আগে পাঁচটা জামা কিনলে এখন দুইটা কিনবে।’
এ সময় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ছাত্রী বলেন, ‘সিট বরাদ্দের এই ত্রুটিপূর্ণ তালিকা বাতিল করতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নতুন সিট বরাদ্দ দিতে হবে। সব ধরনের বৈষম্য ও হয়রানি দূর করতে হবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমার সিট বুঝিয়ে না দিলে আমাদের বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন স্যারের শেখানো পন্থায় প্রশাসন ভবনের সামনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।’
এ বিষয়ে রহমতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ ইসমাত আরা বলেন, ‘সোমবার মেয়েটি মাগরিবের সময় আমার রুমে আসে। তখন অফিস টাইম ছিল না। মেয়েটি এসে আমাকে রূঢ়ভাবে বলে আমি নাকি তাকে হতদরিদ্র বলেছি। আমি আবাসিকতার একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সে বারবার বলতেছিল, কেন তাকে সিট দেওয়া হয়নি।’
আসন বরাদ্দ ও জামা-কাপড় নিয়ে মন্তব্য করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ও যদি মিথ্যা কথা বলে আমি কী করবো। আমি কিছুই জানি না। এবার আমরা যোগ্যতা ও অভিন্ন নীতিমালার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করেছি।’