আবহমান বাংলার সকল দুঃখী নারীর প্রতি নিবেদন
রিতার দুই চোখ আজ বিমর্ষ-করুণ।
আকাশে নবীন মেঘ দেখে
মনে হয় যেন সারাটা আকাশ জুড়ে লেপ্টে আছে
রিতার দুই করুণ চোখের কাজল,
আর চোখের দৃষ্টিতে বাধা পড়ে আছে
কোনো প্রাচীন দিনের বর্ষণমুখর সন্ধ্যা।
জারুলের শাখায় শাখায় উদ্বেগ
বর্ষা গেলে পরে আসবে শরতের
নিদারুণ বায়ুবেগ।
মানুষ জন্মেছে, গিয়েছে ভুলে বিষাদ কত কত!
লেখকের বুকে সাহস আছে যত
রিতার বিষাদ লিখে যেতে হবে,
শরতের আকাশ তার ফুরসত পাবে কত!
হে পাঠক,
এসো বৈরিতা ভুলে সব
তিলোক কামোদের কল্লোল তুলি এসো।
শরৎ আকাশ, মেঘ মুছে যাক কালো
রিতার চোখে আকাশ সুনীল আলো।
বিগত জন্মের কস্মিন কালো পাপ
এই জন্মে কোন ফাঁকে নিল উত্তাপ?
হে পাঠক,
তাকে হটাও হটাও আজ
আঁধারের বুকে মারো আলোর তাজ।
বাঙলার যত খরস্রোতা নদীর ঢেউ
রিতার চোখেই দেখেছে কেউ কেউ।
পলি জমে তাতে পাথর হয়েছে আজ
চন্দ্র তিথিতে পূর্ণিমারে দেও ডাক,
আজ সজল চোখের ভাঁজে
বাতি জ্বেলে দাও, ফোঁটাও নীরব পুষ্প,
বাজতে থাকুক সাইরেন যত শঙ্খ।
এই বাঙলার যত নদীপথ জুড়ে
রিতার দুঃখী আঁচল রয়েছে পড়ে,
সে আঁচল তার তুলে দাও কাঁধের 'পর
ঘুঙুর যদিওবা পড়েছে রাঙা পায়,
ভেসে যেতে দাও সপ্তডিঙা মধুকর।
যে বাঙলার ভাওয়াইয়া সুর
ডাহুকের পায়ে বেঁধেছে নূপুর,
উদাস করেছে বালিকা বঁধুর সজল আঁখি
ভাটি গাঙ বেয়ে আর কতদূর যাওয়া বাকি!
সময় হয়েছে আজ পাল তোলার
হাল ধরেছে মাঝি দশ, ছাড় আজ বালার।
শালবন লতার আখরে আখরে
দাগ কেটেছে পদ্মপুরাণ
তবুও তো প্রাচীর বুকে সূর্য ওঠে এই চিরসত্য
মাথা নত করে আকাশ ওই দিগন্ত রেখায়,
এই দুঃখী বাঙলায় রিতার যত অভিশাপ
উঠুক ফুটে বর্ষামুখর পুষ্প, শাখায় শাখায়।
বাজতে থাকুক সাইরেন যত শঙ্খ
ভয় যেন না পায় সে,
এই ভাটি বাঙলাই দেবে তার সঙ্গ
ভয় যেন না পায় রিতা
থাকে যেন সদাই নিঃশঙ্ক।