প্রকৃতি
সময় হয়েছে। কিন্তু
গোসলে ঘোর আপত্তি, তাই—
মায়ের শাসন, কয়েকটা মার, বাচ্চার কান্না ঝড়
শরীরে পানি ঢেলে দেওয়া বৃষ্টি
গোসলের পর চুপচাপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টিভেজা অরণ্য।
পরি পাওয়া
এই যে পৃথিবীতে পরিরা বেড়াতে আসে, তাদের কি বিয়ে হয় না, সংসার? —পাড়ে কাপড় রেখে পুকুরে গোসলের সময় কেউ যদি তা গোপনে রেখে দিতে পারে অথবা তাদের দেখার সময় তাদের হাত বা শরীর ছুঁয়ে দিতে পারে তবে সেই মানুষের সাথে নাকি পরির বিয়ে হয়ে যায়...!
সত্যি-মিথ্যা যাচাই করতে একরাতে পরির হাত ছুঁয়েছিলাম।
সর্বনাশ! নানি বলেন। তার সাথে সবকিছু নিয়ে আমার খোলামেলা আলোচনা হতো। নানিও গত হয়েছেন আজ আট বছর। এইসব বিষয়ে আর কেউ কিচ্ছু জানে না।
পরিকে আজও আমার স্ত্রী মনে হয়...
শব্দ
কেবল পানির শব্দ জেগে আছে। কুনি জাল হাতে মাছ ধরার জন্য কালভার্টের রিঙের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। অনেকক্ষণ আগে—মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। অতলে থাকা উঁচু-নিচু খাদ, পানির যাত্রাপথে গেঁথে রাখা লাঠি বা ঢোল কলমির ঝোপ, বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছো যখন কিছু দ্বারা তখনই কি তোমার উৎপত্তি? হচ্ছে ফেনা...
আশপাশ ঘরবাড়িহীন এই স্থানে যদি করি শব্দের সৃষ্টি অথবা গান, কী-ই বা আশা করা যায় নিজের প্রতিধ্বনি ছাড়া? তখন থেকে শব্দের ‘জীবন’ নিয়ে মাথায় নতুন... ভাবি, এখন কোনো শব্দই যদি অবশিষ্ট না থাকত—কী নারকীয়-ই না হতো।
‘শব্দ’ —আমার সাথে তোমার দেখা হয়েছিল, তোমার জীবিতকালে!
স্পন্দন
পাখিটা উড়ে যাবার পর, হয়ত ভোলাই যেত বেদনাগুলি—
পুরোনো দিনের মতো। তার উড়ে যাবার পথে যেভাবে রেখে যায়
দৃশ্যের পর দৃশ্য, সেরকম...
কী কী রেখে যাচ্ছে, কী আসছে সামনে জানে না!
জলোচ্ছ্বাস বা ঝড় সৃষ্টি হয় যখন সমুদ্রের বুকে
আছড়ে পড়া ঢেউ ওঠে প্রকৃত জলরাশি এড়িয়ে
না বেদনা, না উড়ে যাওয়া, না পাখি—মূল প্রসঙ্গ না জানলেও
ডাল কাঁপার স্পন্দন এখনো আমার বুকে।
পূর্বরাগ
পানকৌড়ি যখন জলচ ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে বেড়ায়। পড়ে তার গরম নিশ্বাস! ডানার ঝাপটায় ঢেউ ওঠে জলে। হালকা গভীরে চুপচাপ শুয়েছিল যে পুঁটি; ধরে নিয়েছিল আজ সমর্পিত হবে বলে—তার শরীরে লেগেছিল একবার ঠোঁটের ছোঁয়া—অদ্ভুত শিহরন—মনে হয়েছিল প্রায় মরেই যাবে—
পানকৌড়ি ডুবলেই পারে। ডুবে ডুবে থাকতে পারে অনেকক্ষণ। গ্রীস্মের রোদে মরতে রাজি পুঁটির আজ অসহ্য লাগে, অসহ্য লাগে...
বিরিশিরি
তোমার নাম শুনে কারো বুক ব্যাকুল হবে—প্রাচীন বৃষ্টিবৃক্ষের ছায়া। উৎরাইল বাজারে আজ পর্যটকদের ভিড়। কেউ কেউ দোকানে খুঁজছে আদিবাসীদের নিজস্ব পোশাক। চায়ের দোকানে বসলে মুখোমুখি, মনীষা-সপ্রতিভ। আমরা কি যাব, রাখব চোখ সিমসাংয়ের জলে? রাত দুটোয় একাডেমির বারান্দায় ঠান্ডা বাতাস। দেবদারু সারি রাস্তা। শূন্যতা অনুভূত হলে খোঁজ পাবে—জেগে থাকা অসংখ্য তিল!
হেঁটে যাই যদি অসম বয়সীরা সাথে, উৎরাইল বাজারের কারো মনে রেখাপাত করবে না। পথে শুধু এখনো শুকনাকুড়ির ক্ষত। লিগায় খামালের দরাজ কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে—‘সালজং দেখে রেখো পৃথিবীকে...’
ফাংস্রি
এখানে বেড়ে উঠছে চাঁদকন্যা—
যখন সে দাপিয়ে বেড়ায়
পাহাড়ের এপাড়া ওপাড়া
শক্ত আবরণের বুকে
ধুপ ধুপ শব্দে
পাহাড় টের পায় নিজের
হৃৎস্পন্দন।
তাকে হাসাবে বলে
গায়ে ফুটিয়ে তোলে
বেগুনি বা হলুদ ফুল!
তার বুকে দুঃখ জমা হলে
অশ্রু হয়ে নামে রংদী নদীতে...
জাজং মাম্মা ফাংসি রি রি
জ্যোৎস্নার আলো—
চাঁদকন্যা— জোরে হাঁটো
দৌঁড়াও, দাপিয়ে বেড়াও
দুঃখ ভুলো, দুঃখ ভুলো...
টিপ
আয়না,
এতদিন তুমিই শুধু তাকিয়েছিলে
তোমার দিকে কেউই তাকায়নি!
দরজা,
নিজের ভেতর কেবলই তুমি
ঢুকতে দিয়েছ
তোমার মনে কেউ ঢোকেনি?
দেয়াল,
এতদিন ছিলে যেন অযত্নে-অবহেলায়
বিশ্রী অভিধা পেয়ে মুখচোরা,
গভীর অভিমানে—
কেউ কী জানে—
মেয়েটি আমার সাজতে
শিখছে, সাজাতেও;
সবার কপালে
পরিয়ে দিচ্ছে,
নানা রঙের টিপ...
সম্পর্ক
অনেক বছর পর
যদি নদীতে আসে ঢল
কী ভাবে নদী?
ভুলে গিয়েছিল জল...
যদি দু-কুল ছাপিয়ে ভাসে
ভাঙে-শাখা নদীর মতন!
মূলস্রোত মরা-শীর্ণ
নামের সাথে যুক্ত
পুরাতন...
অনেক বছর পর এলে
পরিচিত বলে আমাকেই
ডাকলে—
এখন কী হবে তবে
ঢলে ভাসছে ভাঙ্গা কুলো!
আমি কী আর জানি
জল কোন দিকে গড়ালো...
অতিথি
নয় অনধিকার চর্চা,
ঢুকে পড়ব না সংসারে—
সহসা
চুপচাপ, মতো থাকব
বেরিয়ে পড়বে না ক্রোধ!
যত্রতত্র...
কিন্তু ঘুম
বিবাদ থেকে সরলাম
খোঁজ বোধিদ্রুম।
যদিও না পাই সামান্য খেতে
নিজেকে অতিথিই ভাববো
তোমরাই যাও জিতে!