পোয়াতি বৃষ্টি
অনেকদিন বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখিনি
হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া বৃষ্টি
না দেখলেও অনুভব করেছি
বৃষ্টি একটা আস্ত পুরুষ মানুষ;
হাত ছোঁয়ার বাসনায় গড়িয়ে যায়
ছুঁয়ে যায় আপাদমস্তক;
প্রকাশ থেকে গোপন যত কথা
অঙ্গের কলকাঠি।
বৃষ্টির খবর নেই অনেকদিন;
হালের বলদগুলো বৃষ্টি চায়, অনেক নরম মাটি খুঁড়ে আনবে
এক পোয়াতি গাছ;
আমি ভুলিনি আমার বৃষ্টির জলে
পোয়াতি হবার সম্ভাবনা।
ণ হন্যতে
প্রেমিক প্রতারক হলে
নিজেরে বেশ্যা মনে হয়
খদ্দের তবু টাকা দিয়ে কেনে
প্রতারক খায় অবিশ্বাসে...!
প্রেমিক প্রতারক হলে প্রতিটি রাত
ভোরের দিকে ধাবিত হয় না
যে বিস্তৃত বাহু আলিঙ্গনে ছুঁয়েছে নরম ঠোঁট
ঘন চুল আর মধ্যমা বরাবর হৃৎপিণ্ড
তারা নিজের মৃত্যু চায়
ঊরুর ভাঁজে খুঁজে রাখা সুখে
তারেও বর্গা দিতে হয় জমিন
ঘেন্না লাগে নিজের শরীর
প্রেমের নামে আর কেউ এলে
যে প্রতারক নিজেরে প্রেমিক বলে
তাকে দাও আরো বেশ্যার খোঁজ...
আদিগন্ত কটাক্ষ
এই যে তোমারে ঘিরা আমি চুরমার হইয়া যাই
এর সব গিয়া ঠ্যাকে তোমার ব্যস্ততার দরজায়
আমি ঠায় দাঁড়াইয়া ভাবি, কী করুম তবে
এক কলিং ঘণ্টা লগে দাঁড়ায় সমান্তরালে
বাজলেই জানি বাজবো আরও মসৃণ কণ্ঠ দরদ
আমি আরও চুরমার হমু দ্বিতীয়ার চান্দের লাহান;
আমার হাতগুলো বাড়াইতে বাড়াইতে আজ বনসাই
একহাত, মাইপা রাহে আরেক হাতের দূরত্ব,
সার-অসার আমার পা’গুলান ভাবে আর কত দূর
সিঁড়িগুলা নাইমা আসে লতাইন্যা সাপ যেন!
আমি গুণি আর গুণি, গুণতে গুণতে জানি
তুমি আবারও চুরমার করবা আমারেই
চকখের চাহুনি দিয়া জ্বালাইবা মদনের ছাই
তুমারে ঘিরা ঘুরুম লাটিমের আংটায় আমি
আমার কামিনী ফুল ছুঁইয়া দেহা হইবো না
ছুইয়া তোমারেই ভাবুম আমার ব্রহ্মাণ্ড
আমি শামুক হইবো, শালুক হইয়া রইবোー
এক জীবন থাকি যাইবো তবু চুরমার হইবার তরে।
রূপকথা
মন কান্দে
আগেও কানছে
কাঁসার বাসনের ঘটঘটানিতে কান্দে
কান্দে যেন মাগের কুয়াশাー
কান্দে মন
না পাইলেই কান্দে;
এত আসাইরা জল
খড়ের চালে ঝপঝপ পড়ুনিー
কান্দে
রান্দা-বাডি শেষ কইরা চোখ কান্দে
এক লগে কান্দে সিথানের বালিশ।
সাদা বৃত্তান্ত
সাদা বৃত্তান্ত তার পুরো ছবিটি
যেমন কামিনী ফুলের চিকন শরীর
রেণুর পরে থকথকে সাদার মিথস্ক্রিয়া
ঝরে পড়ে ছুঁয়ে দিলেই।
রজনীগন্ধার মতো ঊর্ধ্বমুখী
সবুজ ছাপিয়ে ঝকঝকে সাদা সাদা
ভালোবাসা সাদা
ভক্তি সাদাーধোঁয়া সাদা
আজকাল শীতলক্ষ্যা নদীর ঢেউ
খেলে যায় সাদায়।
উড়ে যাওয়া বক পাখির ডানা জুড়ে সাদা মেঘ
তোমার ওড়না সাদা অন্তর্বাস সাদা
স্তন সাদা দুগ্ধ সাদা
আর ধারণা অমৃতও সাদা
সাদায় সদা জাগ্রত আলো
তুমিও সাদা
আমিও সাদা
চোখ দুটো ধূসরতা কাটিয়ে আছড়ে পড়তে চায়
সাদার মিথস্ত্রিয়ায়
অনন্ত শুভ্রতায়।
পাচিলের ভেদ
তোমারই প্রতীক্ষায়
আমার দরজায় কড়া নাড়ে প্রত্যাখ্যান
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবি এলো বুঝি
উড়োচিঠি ঠিকানাহীন খামে
ভাসতে ভাসতে অক্ষরেরা মেঘ হয়ে যায়
অঝোরে ঝরে আমারই বারান্দায়
আমার ভেজা চুল বৃষ্টি মেখে
আবারও দাঁড়ায় প্রত্যাখ্যানের অভিঘাতে
চাইলেই মরে যেতে পারতামー
আমি মরলে তোমার অপেক্ষায় কে রবে!
রাতজাগা ভারী চোখগুলো অসহায় হরিণের মতো
উড়ে যাবে নিজস্ব জলের কাছে
এরপর আরও দূর থেকে ভেসে আসবে
অদৃশ্য রানারের মিছামিছি ডাক
হরকরার ঝুলিতে ঝুলবে আমার ডাকনাম
কেউ কি আছে এখানে!
বহুদিন আগে ছেড়েছে যে জীবনের নোঙর
তারেই ভাসাই নদী ভেবে,
ভালো থাকুক জীবনের গল্প
তারা যারা তোমরা আমাকে প্রত্যাশী করেছ
জানিয়েছ তৃষ্ণার্ত মাত্রই ডুবে যায় জলে
ডুবে জেনেছি একাই জলের ভেতর বসে আছে
সহস্র মীন, তাদের প্রত্যাশায়,
আমি তোমাদের মতো বাঁচতে চাইনিー
লাগামের বাইরে যে বুনো ঘাস জমেছে শিশিরের
টুপটুপ করে, আমি তার শব্দ শুনতে চেয়েছি
ভোরের পায়ে আঙুল পেতে দিয়ে
আমি জমিয়েছি স্বপ্নের একেবারে শেষবিন্দু,
তোমরা যারা নিজেদের পাসওয়ার্ড নিয়ে আছ
জানছোই ব্যক্তিগত সমস্ত
মানুষকে অস্বীকার করে দেওয়া
আমি তাদেরও প্রত্যাশী
যেন বছর ঘুরতেই কয়েকটা শ্রাবণ আমার
মেঘমল্লার হয়ে জানাবে রূপকথা,
আমি তীব্র প্রতীক্ষায় জানছি
তোমরা সুখী, সমুদ্র দেখ, জীবন দেখ
আরও দেখ পাচিলের বাইরে রোদ
তোমাদের ওম পাতা রাতে যে সন্তানের শরীরটি
জন্ম নেবে, তারেও সুখে রেখো;
আমি মরতেই পারতাম, তবে কেন মরণ!
আমি মরলে কে প্রতীক্ষায় রবে!
অগ্রন্থিত
আর্ত না হলে চিৎকার করি না
কেন না সমূহ বিবাদের নাম কলহ হলেও
ব্যক্তিগত বোধ আমাকে নিশ্চিত করে
আমি মূলত কবি!
সংশয় না হলে নিরুত্তর থাকি
জেনে গেলে যে আহ্বান তারে জমায়
বহুভাষী সৈনিক
আমি মূলত কবি আমি জানি!
গ্রস্ত না হলে এমন থাকা যায়
যেমন থাকে ম্যাচবাকসে দেশলাই
যৌথ অথচ বিধ্বংসী
আমি বারুদ জমা করি অনাহারে
কেন না কবিতায় মৌলিক সংশয় আমারে জানায়
আমি কবি নই, অথর্ব চিন্তার লগ্নি!
অক্টোবরের রোদ
সংকোচে উৎসারিত হয় আমাদের সারসডানা
ভীত নয়ন পুনরায় জন্মায় কর্নিয়ার কাছে
রেডির সলতে জ্বলতে জ্বলতে যে সকাল পৌঁছে যায়
ভোরের আলোর বিপরীতেーঅন্ধকারের ভাষায়
মানুষ মূলত ইতিহাস
বিসর্জন করে নিজের পায়ের ঘাস
বলিরেখায় জমায় অনামিকায় কনিষ্ঠায় পরিহাস
আমাদের শেষ দেখায় যে অমৃত বিদায়
তারে শেষ বলতে দ্বিধা হয়ー
অক্টোবরের আকাশে তখন রোদ নামছে,
কৃষ্ণচূড়া ভেবে নিলে রঙ্গনও খলখলিয়ে হাসে
পুনর্জন্ম তো আত্মস্থ ওয়াইন...
যদি বলো মিসক্যারেজ তারও হত্যাকারী যে জরায়ু
সে মরে গেলো বলেই তো ভালোবাসা রি-বার্থ হলোー
আমার সারসডানায় যে বাতাস লেগে থাকে
তারে মুছে দাও মুছে দাও আমি জলে ডুবি!
সংখ্যাতত্ত্ব
আমি আগের নম্বরে নেই
জৈবিক রূপান্তর সংখ্যা সবই বেড়েছে
চর্বির ভাঁজে জমেছে সময়ের স্তর;
বত্রিশ নম্বরের ব্র্যান্ড আমার মালিকানা ছেড়েছে
ছেড়ে গেছে একক প্রেমিক সংখ্যা।
নতুন নম্বরে আছি আমি আর আমার গতি
তবু পুরোনো কেউ ছুঁয়ে যায় আমাদের
শৈশবে পাঠ্য ইংরেজি বই এর অ্যাপ্লিকেশনের মতোー
‘অন বি হাফ অব দ্য পিপল
বোদা উপজেলা, পঞ্চগড়’
পড়েছিলাম সেখানেই নলকূপ চাই।
মৃত্তিকার সতীচ্ছেদে বেরিয়ে আসবে রসালো জল
অমৃত ভাবনায় বয়ে যাবে ভূমিজ সন্তানー
কামজ সংখ্যাতত্ত্বের চর্যার জীবনে।
হিজল ফুল
আমি তারে ভালোবাসতাম,
শামুক টামুক হিজল ফুল টুল না
যে ভালোবাসায় শরীর কথা বলে
তার জন্য মরতে ইচ্ছে ভালোবাসা না
বরং সে না থাকলে আর কারে ভালোবাসা যায়
আমি ফন্দি করতাম!
আমি তারে ভালোইবাসতাম
ধরেন ভালোবাসতে টেকা লাগে টাইপ
তারপর আছে না একটা প্রেম কেমন করা মন
ভালোই বাসতাম তারে
এমন ভালোবাসতাম আমি
নিজেরে সিঙারা বানায়া তারে আলুর মতো
কে যে সিঙারা খায়া গেলো!
স্নিগ্ধা বাউলের জন্ম নরসিংদী জেলার ঐতিহ্যবাহী বাউল পরিবারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। গদ্যও লেখেন। কবিতার বই ৬টি।