পাণ্ডুলিপি

‘অন্তঃস্থ আ’ থেকে

এপ্রিল বিশ। সকাল সাতটা আট

অবশেষে ঝড় এলো। এলো ঝড় আকাশ ভেঙে—। কোথাও না কোথাও আম পড়ছে। ঘর পড়ছে কোথাও না কোথাও। ভালো কোনো ঘুম না হলেও ঝড় দেখতে লেগে যাই—চোখ সরাতে পারি না। হুহু করে মন ভারী হয়ে যায়। ভারী হয়েই ছিল—আরও। আবার একটা চিঠি লিখতে ইচ্ছা করে। লিখে ফেলি। অনেক পুরোনো কথা দিয়ে। পোস্ট করার জায়গা নেই। লাল-লাল পোস্ট বক্সগুলোকে আর কোথাও দেখি না। তুমি যখন বলছ আচ্ছা ছিঁড়েই ফেলব। এমন কী আর। আর না হয় তোমার কথা না শুনে পকেটে রেখে ঘুমিয়ে যদি যাই যাব এবং চাহিবা মাত্র ইহার প্রাপককে দিতে বাধ্য থাকিব—

* * *

রাতের খাবার। মূল: রাসেল এডসন

বুড়ো বসেছিল ডিনার টেবিলের পাশে—অপেক্ষায়, বুড়ি তাকে রাতের খাবার দেবে। রান্নাঘরে ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে ঠানঠুন শব্দ—বুড়ি বেধড়ক পেটাচ্ছে একটা কড়াইকে, হাত পুড়িয়ে দেয়ার জন্য। জঘন্য লাগে বুড়োর এইসব মারপিটের শব্দ—বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচাতেই থাকে পাত্রগুলো। বুড়োর নিজেরও ইচ্ছা করে ওগুলোকে আচ্ছামতো ধোলাই দিয়ে সোজা করে আসে। তাই সে নিজের মুখেই ঘুসি মারতে থাকে। আঙুলের গাঁটগুলো লাল হয়ে ওঠে তার। আঙুলগুলো দেখে রাগে তার গা রিরি করতে থাকে—লাল রংটা যেন ইচ্ছা করে বেশি জ¦লজ¦ল করে—শো অফ!

বুড়ি পুরো ডিনারের বাসনপত্র রান্নাঘরের মেঝেতে ফেলে দিয়ে গালাগালির তুবড়ি ছুটিয়েছে ততক্ষণে—এবার তার বুড়ো আঙুলে প্রচণ্ড ছ্যাঁকা লেগেছে। সব চামচ, কাঁটা-চামচ, কাপ-পিরিচ ইত্যাদি সব একসাথে তারস্বরে চিৎকার করে ওঠে। একটা রাতের খাবার—একজনের হাত-টাত পুড়িয়ে শান্ত হয়নি, এখন আবার গলা সপ্তমে তুলে চেঁচাচ্ছে, গোঁঙাচ্ছে। রাগে পিত্তি জ¦লে যায় বুড়োর। পিটিয়ে ওদের তক্তা বানিয়ে ফেলতে পারলে কিছুটা রাগ কমত।

নিজের মুখে-মাথায় ঘুসি মারে বুড়ো—মেঝেতে পড়ে যায় অজ্ঞান হয়ে। জ্ঞান আসার পর এত রাগ হয় যে আবার কয়েকটা দমাদ্দম ঘুসি বসায় চোয়ালে। এবারে কেমন মাথা ঘোরে। এতে তার আরও রাগ হয়—দেয়ালে ঘা লাগাতে থাকে মাথা দিয়ে: নে মাথা যদি ঘুরবই, এবার ভালো করে ঘোর—বলতে থাকে সে; তারপর ধুপ করে বসে পড়ে মেঝেতে।

ওহ, পা কাজ করছে না, হাঃ!...পায়ে কিল দিতে থাকে বুড়ো এবার। মাথাকে একটা ভালো শিক্ষা দেয়া গেছে, এবার পা-দুটোকে একটা যথার্থ শিক্ষা দিতে হবে।

ওদিকে বুড়ি বাকি সব থালা-বাটি হাঁড়ি-পাতিল সব আছড়ে-আছড়ে ফেলছে—এঘর থেকে সব শোনা যাচ্ছে—বাসনপত্রের চিৎকার, গর্জন, গোঁঙানি...

বুড়ো দেয়ালে ঝোলানো আয়নায় নিজেকে দেখে। বাহ! হাসো এখন! ভারি মজা না! দেখাচ্ছি—আয়নাটা নিয়ে সে আছাড়ে মারে চেয়ারটার ওপর। চেয়ারটা ভেঙে যায়। সাবাস, নিজে আর চেয়ার হয়ে থাকতে শান্তি লাগছে না বুঝি! কেউ তোমার ওপর পাছা পেতে বসবে ভাবতে ভালো লাগছে না, না? চেয়ারের ভাঙা হাতলটা তুলে চেয়ারটাকে গুড়িয়ে দেয় সে।

বুড়ি ততক্ষণে হাতে কুড়াল তুলে নিয়েছে বোঝা যায়—স্টোভটার গায় গবাগব কোপ বসায়। বুড়ো চিৎকার করে বলে: খাবো কখন আমরা? বলে মুখে একটা জ¦লন্ত মোমবাতি পুরে দেয়।

—যখন আমি বলব যে সব রেডি, উলটা মুখ-ঝাঁমটা মেরে বলে বুড়ি

—তোমার রুটিগুলোকে একটু পিটিয়ে ভর্তা করে দিয়ে যাব? তুমি একা পারছ না মনে হয়!

—এখানে এলে তোর খবরই আছে—লাথি দিয়ে মাথার সকেট থেকে চোখ বের করে দেবো!

—আমি তোর কান কেটে কুত্তাকে দিয়ে খাওয়াব

—ঘুসি মেরে মুখ ছাতু করে দেবো তোর

—তোর ভুঁড়িতে লাথি দিয়ে ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেবো আমি

—তোকে দা দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে ফেলব

বুড়ো অবশেষে নিজের একটা হাত খেয়ে ফেলে। বুড়ি বলে, এত বড় মূর্খ অসভ্য আমি কোথাও দেখিনি—আগে রান্না করে নেবে তো হাতটা! তুমি কাঁচা মাংস খাওয়া পশুদের মতো আচরণ করো সবসময়—জানো যে রান্নাঘরটাকে বাগে আনতে কত কষ্ট করতে হয় প্রতিদিন! নয়তো ও আমাকেই গুড়া মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করে সবচেয়ে চকচকে চিনামাটির প্লেটে গরম গরম পরিবেশন করবে ইঁদুরগুলোকে। কচকচ করে আমাকে চিবিয়ে খাবে ওরা। তারপর আসবে রাজ্যের যত মাছি—তুমি জানো না আমার রান্নাঘরে আমি মাছি দেখতে পারি না! জঘন্য!

বুড়ো একটা চামচ খেয়ে ফেলে।

বেশ এবার আমাদের একটা চামচ কম পড়বে

বুড়ো লোকটা রাগে অন্ধ হয়ে নিজেকেই গিলে ফেলে এবার

খুব ভালো, বুড়ি হেসে বলে, শেষ পর্যন্ত ওটাও করে দেখালে!