ম্যাগনেসিয়াম কেন জরুরি এবং কোন কোন খাবারে পাবেন জেনে নিন

ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ৬০০টিরও বেশি এনজাইমেটিক প্রতিক্রিয়ার জন্য কোফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।আমাদের পেশী এবং স্নায়ু কীভাবে কাজ করে তা নিয়ন্ত্রণ করে খনিজটি। এছাড়া হাড়কে মজবুত রাখার পাশাপাশি হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে ম্যাগনেসিয়াম। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর প্রতিদিন প্রায় ৩১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন এবং ৩০ বছর বয়সের পরে প্রয়োজন ৩২০ মিলিগ্রাম। গর্ভবতী নারীদের অতিরিক্ত ৪০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন। ৩১ বছরের কম বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রয়োজন ৪০০ মিলিগ্রাম এবং ৩১ বছরের পরে দরকার ৪২০ মিলিগ্রাম। শিশুদের বয়স এবং লিঙ্গের উপর নির্ভর করে ৩০ থেকে ৪১০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হতে পারে। যদি আপনার ডায়েটে ৩০০ মিলিগ্রামের কম ম্যাগনেসিয়াম থাকে তবে, নানা ধরনের শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। ম্যাগনেসিয়ামের এই কম মাত্রাকে বলা হয় হাইপোম্যাগনেসিমিয়া। 

ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি যেসব কারণে উদ্বেগজনক

  • ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি অস্থির লেগ সিন্ড্রোমের মতো সমস্যা বাড়াতে পারে। এই অবস্থায় পায়ে অস্বস্তিকর অনুভূতি হয় এবং নড়াচড়া করলে কমে যায়।
  • পেশী সংকোচন এবং শিথিলকরণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে ম্যাগনেসিয়াম। অপর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা এই ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে পেশীতে খিঁচুনি এবং সাধারণ দুর্বলতা দেখা দেয়।
  • ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর সাথে একত্রে কাজ করে ম্যাগনেসিয়াম। কম ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা হাড়ের ঘনত্বে প্রভাব ফেলে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম শোষণ এবং বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে । ফলে যখন এর মাত্রা অপর্যাপ্ত হয়, তখন হাড় গঠনে ক্যালসিয়াম কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয় না। এই ভারসাম্যহীনতা হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে ।
  • স্নায়ুতন্ত্রের উপর এর প্রভাব রয়েছে। ফলে মেজাজ স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ম্যাগনেসিয়াম অপরিহার্য। বর্ধিত উদ্বেগ, বিরক্তি এবং বিষণ্নতা সবই ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির ফলে হয়। সেরোটোনিন মেজাজের সাথে জড়িত মস্তিষ্কের একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা ম্যাগনেসিয়াম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • এটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাগনেসিয়াম হৃৎপিণ্ডের পেশীর সংকোচনের উপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিয়মিত হার্টবিট নিশ্চিত করে। এটি রক্তনালীর প্রসারণ ঘটিয়ে রক্তচাপের উপরও প্রভাব ফেলে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ এড়ানো যায়। ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে রোগীদের হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ায় এর ঘাটতি।

যেসব খাবারে পাবেন ম্যাগনেসিয়াম 

১। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কুমড়ার বীজ। ম্যাগনেসিয়ামের পাশাপাশি জিঙ্ক এবং আয়রনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে এই বীজ।

২। পালং শাকে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ম্যাংগানিজ এবং ভিটামিন এ, সি, এবং কেসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মেলে। প্রচুর ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও সরবরাহ করে এই শাক। 

৩। এক আউন্স কাজুবাদামে ৮০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাবেন। 

৪। ম্যাগনেসিয়ামের দারুণ উৎস কলা। একটি মাঝারি আকারের কলায় ৩২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম মেলে। এছাড়া পটাশিয়াম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় কলাতে। 

৫। ডার্ক চকোলেটে ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আয়রন, কপার এবং ম্যাংগানিজও মেলে এটি থেকে। ডার্ক চকলেটে প্রিবায়োটিক ফাইবার থাকে যা অন্ত্রের জন্য উপকারী। 

৬। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ সবজি ব্রকলি ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। খাবারে ব্রকলি অন্তর্ভুক্ত করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। 

৭। চিনাবাদাম ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সরবরাহ করে। শক্তির মাত্রা বজায় রাখতে এবং হার্ট ভালো রাখতে চিনাবাদাম রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। বাদাম ফাইবার এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের একটি ভালো উৎস এবং ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে এটি।


তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি, টাইমস অব ইন্ডিয়া